অর্ণব আইচ: কলকাতা থেকে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিল উত্তর কলকাতার পরিবারটি। কখনও সবুজ উপত্যকা, আবার কখনও বা রুক্ষ পর্বতের পাশ দিয়ে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে যাচ্ছিল গাড়ি। জম্মু ও কাশ্মীরের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করছিলেন দম্পতি। কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারেননি যে, গাড়ির মধ্যে ঝড় উঠেছে দু’টি হৃদয়ে। গাড়ির চালকের পাশে বসে থাকা দম্পতির তরুণী কন্যা ও চালকটি চোখে চোখেই কথা বলে চলেছে অনেকক্ষণ ধরে। যখন পর্যটকদের খাওয়াদাওয়ার জন্য গাড়ি থেমেছে, তখন দু’জনের মধ্যে কথাও হয়েছে। ক্রমে হয়েছে ফোন নম্বর আদান-প্রদানও।
কোনও সিনেমার গল্প নয়। নয় কোনও প্রেমের কিসসা। জম্মু ও কাশ্মীরের যুবকটির সঙ্গে ‘কলকাতার কলি’-র প্রেম এভাবে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তাতে রয়ে গেল ‘অপরাধের ছোঁয়া’। জম্মুর বাসিন্দা ওই যুবকের সঙ্গে ঘর ছেড়ে যাওয়া উত্তর কলকাতার তরুণী কলেজ-ছাত্রী কয়েকদিন আগে কোনওমতে হোয়াটস অ্যাপ কল করে জানান, তিনি রয়েছেন অসমে। জম্মু ও কাশ্মীরের বদলে কীভাবে মেয়ে অসমের ডিব্রুগড়ে পৌঁছল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মা ও বাবা। কিন্তু সেই উত্তর তাঁরা পাননি। এর পরই অভিভাবকদের অভিযোগ, তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করে লুকিয়ে রাখা হয়েছে ডিব্রুগড়ের একটি জায়গায়। এই ব্যাপারে উত্তর কলকাতার চিৎপুর থানায় মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ তুলেছে ওই দম্পতি। তাঁদের অভিযোগের আঙুল জম্মুর যুবক দীপক সিংয়ের বিরুদ্ধে। রবিবার মামলা শুরু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে ছুটিতে জম্মু ও কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েই এই ঘটনাটির শুরু। যে গাড়িটি করে দম্পতি মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে বের হন, সেই গাড়ির চালক ছিল দীপক সিং। জম্মুর বাসিন্দা সুঠাম চেহারার ওই যুবকের পাশেই বসে ছিলেন উত্তর কলকাতার একটি কলেজের ছাত্রী ওই তরুণী। দম্পতির অজান্তেই দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক এগিয়ে যায়। বেড়িয়ে কলকাতায় ফিরে আসার পরও জম্মুর বন্ধুটিকে ভুলতে পারেননি বরানগরের বাসিন্দা সেই তরুণী। দু’জনের মধ্যে ফোন ও হোয়াটস অ্যাপে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হত। ভিডিও কলে হত ‘দেখা’। কিন্তু এখানেই থেমে থাকেনি ওই যুগল। বান্ধবীর আকর্ষণে কলকাতায় দৌড়ে আসে দীপক সিং। গত ২৪ জুন চিৎপুর এলাকায় কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি ওই তরুণী ছাত্রী। কোথাও মেয়েকে না পেয়ে পরের দিনই অভিভাবকরা চিৎপুর থানায় মিসিং ডায়েরি করেন।
অভিভাবকরা পুলিশকে জানিয়েছেন, গত ২৭ জুন থেকে মেয়ে তাঁদের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ রাখতে থাকেন। অভিভাবকরা যুগলকে বলেন, তাঁদের বিয়ে দেওয়া হবে। দু’জন যেন কলকাতায় ফিরে আসে। কিন্তু তাঁদের মেয়ে আসলে কোথায় রয়েছে, তা রহস্যের মধ্যেই থেকে যায়। তাঁদের ধারণা ছিল, মেয়েকে নিয়ে দীপক পৌঁছেছে জম্মু বা কাশ্মীরে। পুলিশের কাছে অভিভাবকদের অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে তাঁদের মেয়ের সঙ্গে তাঁরা কমই যোগাযোগ রাখতে পারছেন। রবিবার কোনওমতে তাঁরা জানতে পারেন, অসমের ডিব্রুগড়ে তাঁদের মেয়েকে নিয়ে রয়েছে জম্মুর যুবক দীপক। হোয়াটস অ্যাপে তাঁরা একটি লিঙ্ক পান। ওই লিঙ্কটি ডিব্রুগড়ের একটি হোটেলের। ওই দম্পতির অভিযোগ, দীপক নামে ওই যুবক তাঁদের মেয়েকে অপহরণ করে আটকে রেখেছে। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ মামলা দায়ের করেছে। ওই হোটেলের লিঙ্ক ধরে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তের প্রয়োজনে কলেজ-ছাত্রীকে উদ্ধার করতে অসমে গিয়ে তল্লাশি চালানো হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।