• তিস্তায় লাল সঙ্কেত, ১৪টি গ্রাম প্লাবিত জলপাইগুড়িতে
    বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি ও সংবাদদাতা, নাগরাকাটা: আরও ভয়ঙ্কর হচ্ছে তিস্তা! সিকিম পাহাড়ে ভারী বৃষ্টির জেরে মঙ্গলবার তিস্তা নদী ফুলেফেঁপে ওঠে। তিস্তার অরক্ষিত এলাকায় চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে জল। এর ফলে জলপাইগুড়ি জেলার আটটি পঞ্চায়েতের ১৪টি গ্রাম প্লাবিত। জলবন্দি প্রায় ছ’শো বাড়ির দু’হাজার বাসিন্দা। তবে, কালিম্পংয়ে তিস্তার জলস্তর সামান্য নেমেছে। বর্তমানে সেখানে কিছু জায়গায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে উঠে গিয়েছে তিস্তার জল। একইসঙ্গে ধসে বিধ্বস্ত জেলার ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের ১০ মাইল। মঙ্গলবার দিনভর জাতীয় সড়ক দিয়ে কালিম্পং ও সিকিমের যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এছাড়া ধসে জেলার ৭১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

    মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, তিস্তার অরক্ষিত এলাকায় লাল সঙ্কেত জারি করেছে সেচদপ্তর। পাহাড় ও সমতলে নদীর তীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে। নদীর জলস্ফীতি ও ধসের পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। 

    কয়েকদিন ধরেই ফুঁসছিল তিস্তা। সোমবার মাল ব্লকের বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের টটগাঁওয়ের একাংশ প্লাবিত হয়। ওই রাতে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমের বিভিন্ন এলাকায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হওয়ায় তিস্তা আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। রাতেই কালিম্পং জেলার রবিঝোরা ও ২৯ মাইলে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক তলিয়ে যায় তিস্তার জলে। একই পরিস্থিতি তৈরি হয় মাল ব্লকের টটগাঁও পঞ্চায়েতে। সেখানে আরও ৬০টি বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। 

    মঙ্গলবার ভোরে পাহাড় থেকে আরও গতিতে সমতলে ধেয়ে আসে তিস্তার জলরাশি। এতেই ক্রান্তি ব্লকে চাপাডাঙার পন্ডিতপাড়া, বাসুসুবা ও মাস্টারপাড়া, চ্যাংমারি পঞ্চায়েতের সাহেববাড়ি, পশ্চিম দলাইগাঁও, আপালাচাঁদ, জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের বোয়ালমারির বাহিরচর, পেটকাটির দোদলিয়া, নাটুয়ারচর, ময়নাগুড়ির ধর্মপুর পঞ্চায়েতের সর্দারপাড়া, গুরুদেবপুর প্লাবিত হয়েছে। দুর্গতদের বক্তব্য, পাহাড়ে বৃষ্টি ও তিস্তা ব্যারেজ এবং তিস্তা-মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানেল থেকে জল ছাড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাহাড়ে বৃষ্টির দাপট বাড়লে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হতে পারে।

    এদিন ত্রাণ নিয়ে ক্রান্তির দুর্গতদের কাছে পৌঁছন শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। প্রশাসন সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি জেলার চারটি  ব্লকের ১৪টি গ্রামে তিস্তার জল ঢুকেছে। এতে দুর্গতর সংখ্যা কয়েকশো। বেসরকারি সূত্রে সেই সংখ্যা প্রায় দু’হাজার। নদীর জলে চাষের জমি, রাস্তা ও বাড়ির ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও করছে। 

    সেচদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ির দোমোহনি থেকে মেখলিগঞ্জের বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তার অরক্ষিত এলাকায় নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এজন্য সেখানে লাল সঙ্কেত জারি করা হয়েছে। সেচদপ্তরের উত্তর-পূর্ব বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে। মোকাবিলায় নেওয়া হয়েছে যথাযথ পদক্ষেপ। আতঙ্কের সেরকম কিছু নেই। 
  • Link to this news (বর্তমান)