সংবাদদাতা, বোলপুর: সকলকে নিয়ে একসঙ্গে চলার জন্য অনুব্রত মণ্ডলকে বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার ইলামবাজারে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান শেষে অনুব্রতর উদ্দেশে এই বার্তা দেন দলনেত্রী। ২০২৬সালের বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে দলে গোষ্ঠীকোন্দল থামাতে কেষ্ট-কাজলকে একসঙ্গে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি, জেলার নেতাদেরও তিনি জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে বলেছেন।
পুলিস অফিসারকে ফোনে হুমকি কাণ্ডে কিছুটা কোণঠাসা ছিলেন অনুব্রত। তবে দলনেত্রী তাঁর সঙ্গে বৈঠক করায় ও কোর কমিটির কনভেনার পদে বসানোয় এবার অনুব্রতর গুরুত্ব বাড়ল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সোমবার গীতাঞ্জলি প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে শুরু করে জামবুনির ভাষা আন্দোলনের মঞ্চ বা এদিনের সরকারি পরিষেবা প্রদানের মঞ্চ, সব জায়গাতেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে কেষ্টর নাম শোনা গিয়েছে। এদিন তাঁর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী সকলকে নিয়ে চলার বার্তা দেন। নেত্রীর নির্দেশের পর কেষ্ট-কাজলের ঠান্ডা লড়াই বন্ধ হয় কিনা সেদিকেই তাকিয়ে সকলে। প্রসঙ্গত, বীরভূম জেলার রাজনীতিতে কেষ্ট ও কাজল শেখের দ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত। মূলত গোরু পাচার কাণ্ডে অনুব্রতর জেলযাত্রার পর কাজলের উত্থান হতে থাকে। কাজলকে জেলা পরিষদের সভাধিপতিও করা হয়। নেত্রীর তৈরি করে দেওয়া কোর কমিটিই দলের কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করছিল। দু’বছর পর অনুব্রত বোলপুরে ফেরেন। রাজনীতির ময়দানে কেউ কাউকেই এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে রাজি হননি। তাতেই কেষ্ট-কাজলের ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়। দু’পক্ষের অনুগামীদের মধ্যে গণ্ডগোলের অভিযোগও ওঠে। তবে বারবার কোর কমিটির বৈঠক না হওয়ার অভিযোগ তোলেন কাজল। পরে জেলা সভাপতির পদ যায় অনুব্রতর। পাশাপাশি, বোলপুর থানার আইসি লিটন হালদারকে ফোনে গালিগালাজ করার ঘটনাতেও রীতিমতো ব্যাকফুটে চলে যান অনুব্রত। দল তাঁর সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানো শুরু করে। সেকারণে এবার মুখ্যমন্ত্রীর বীরভূম সফর কেষ্টর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। রবিবার সন্ধ্যায় বোলপুরে এসেই আলাদা করে ১০মিনিট কেষ্টর সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই যাবতীয় সমীকরণ বদলে যায়। কার্যত স্বমহিমায় ফেরেন অনুব্রত। সোমবার ভাষা আন্দোলনের মিছিলে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে থাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিতে উত্তরীয় দেন অনুব্রত। এরপর সন্ধ্যায় কোর কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি অনুব্রতকে কোর কমিটির কনভেনার পদে নিযুক্ত করেন। এতে উজ্জীবিত হয়েছেন কেষ্টর অনুগামীরাও। এদিন ইলামবাজারে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও পরিষেবা প্রদানের অনুষ্ঠান মঞ্চে সামনের সারিতে বসতে দেখা যায় অনুব্রতকে। সূত্রের খবর অনুষ্ঠান শেষে, কেষ্টকে ডেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এবার থেকে সবাইকে নিয়ে চলবি। আর যেন গণ্ডগোল না শুনি’। তারপরই হেসে মঞ্চ ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী। এব্যাপারে বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায় সাংবাদিকদের বলেন, সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে চলতে ও একসঙ্গে কাজ করতে কেষ্টদাকে বলে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কেষ্ট-কাজলের লড়াইয়ের কথা যেভাবে বলা হয় বৈঠকে তা কখনও আমার নজরে পড়েনি। অনুব্রত মণ্ডল ও কাজল শেখের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। -নিজস্ব চিত্র