জেলার উন্নয়নে ‘কল্পতরু’ মমতা, ৬৫৮ কোটি টাকা প্রকল্পের উদ্বোধন
বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৫
নিতাই সাহা সিউড়ি
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। মঙ্গলবার ইলামবাজার ব্লকের নীলডাঙা ময়দান থেকে অজয় নদের উপর জয়দেব সেতুর উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবনির্মিত ব্রিজের নামকরণও করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কবি জয়দেবের নাম অনুসারে এই ব্রিজের নামকরণ করলেন। বীরভূম ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার সংযোগকারী এই সেতু নির্মাণে মোট ১৩৮.২৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ২.৭৪কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু উদ্বোধন হওয়ায় এবার বীরভূমের সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের যোগাযোগ আরও সহজ হয়ে গেল। শুধু ব্রিজ নয়, জেলার সামগ্রিক উন্নয়নে ‘কল্পতরু’ হয়ে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই তালিকায় প্রায় এক হাজার প্রকল্প রয়েছে।
এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলার বাড়ি প্রকল্প নিয়ে রাজ্যবাসীকে সুখবর শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এবছর ১২ লক্ষ মাটির বাড়ি পাকা করার জন্য দুই কিস্তিতে টাকা দেওয়া হয়েছে। আরও ১৬লক্ষ মানুষ পাকা বাড়ি পাবেন। ডিসেম্বরে প্রথম কিস্তির টাকা দেওয়া হবে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা মে মাসে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে বাকি বাড়িও পর্যায়ক্রমে সার্ভে করে দু’-তিন বছরের মধ্যে করে দেব।
রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই জেলার সামগ্রিক উন্নয়নে জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় বঞ্চনা সত্ত্বেও জল, আলো, রাস্তা সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে জেলার তিনটি মহকুমার ১৯টি ব্লকে। এদিনও নীলডাঙা ময়দান থেকে প্রতিটি ব্লকের একাধিক নয়া প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেতুর উদ্বোধনের পাশাপাশি খয়রাশোল, ইলামবাজার, সাঁইথিয়া, লাভপুর, নানুর ও রাজনগর, রামপুরহাট-২, মহম্মদবাজার, সিউড়ি-১, নলহাটি ব্লকের একাধিক রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে খয়রাশোল, ইলামবাজার সহ বেশকিছু ব্লকে একাধিক কংক্রিটের রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও জেলাজুড়ে পথশ্রী ও রাস্তাশ্রী প্রকল্পে একাধিক রাস্তার নির্মাণ সহ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে।
জেলার স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ একাধিক ক্ষেত্রেও জোর দেওয়া হয়েছে। এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ২৪টি বেডের নতুন হাইব্রিড সিসিইউ ইউনিট উদ্বোধন হল। একেবারে গ্রামীণস্তর থেকে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে খয়রাশোল, মহম্মদবাজার, রামপুরহাট-১, মুরারই-১ ও ২ সহ একাধিক ব্লক মিলিয়ে মোট ২৮টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৯টি ব্লক প্রাইমারি হেলথ ইউনিটের উদ্বোধন করা হয়েছে। খাদ্য সুরক্ষায় জোর দিতে মোবাইল ফুড টেস্টিং ল্যাব সহ ফুড সেফটি অন হুইলের উদ্বোধনও করা হয়েছে। জেলার একাধিক ব্লকে পানীয় জল পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে সাব-মার্সিবল পাম্পেরও উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নতিকরণে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ সহ ডাইনিং হলের উদ্বোধন করা হয়েছে। পাশাপাশি আদিবাসী আশ্রম ছাত্রাবাসের রান্নাঘরের উদ্বোধন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন প্রায় ৬৫৮কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৮১টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। পাশাপাশি ২২১টি প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়েছে। এক্ষেত্রে খরচ হবে আনুমানিক ২৯৪ কোটি টাকা। এদিন অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে কলকাতা, উত্তর-২৪পরগনা ও মালদহের বেশকিছু প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি একাধিক সরকারি প্রকল্পের সুবিধা প্রদান করা হয়।