• ‘আমরাই রুখব বাল্যবিবাহ’, শপথবাক্য পাঠ করালেন ডিএম
    বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: বাল্যবিবাহ মোকাবিলায় এগিয়ে ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো অনুষ্ঠান মঞ্চে সংবর্ধনা দেবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একযোগে প্রায় ৭০০ স্কুলের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিং হয়েছিল। ওই মিটিংয়ে জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী, পুলিস সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য সহ দু’জন অতিরিক্ত জেলাশাসক, দুই মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক(মাধ্যমিক) সহ আরও অনেকে অংশ নিয়েছিলেন। বাল্যবিবাহের মতো ঘটনা সমাজকে পঙ্গু করে দিচ্ছে বলে জেলাশাসক মন্তব্য করেন। ১৮ বছরের নীচে বিয়ে দেওয়া মানে মেয়েকে বিসর্জন দেওয়া বলেও তিনি জানান। এধরনের ঘটনা রুখতে শিক্ষক, অভিভাবক থেকে ছাত্রছাত্রী প্রত্যেককে এগিয়ে আসার আবেদন জানান। এদিন ভার্চুয়াল মিটিং শেষে শপথবাক্যও পাঠ করানো হয়। এই অভিশাপ থেকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন মুক্ত হতে চাইছে বলেও সাফ জানিয়ে দেন জেলাশাসক। শিক্ষায় এগিয়ে থাকা পূর্ব মেদিনীপুর নাবালিকা বিয়েতেও রাজ্যে প্রথম। প্রতি মাসে ৭০-৭২টি নাবালিকার বিয়ের ঘটনা নথিভুক্ত হয়। যদিও প্রশাসনের নজরে না আসা ঘটনার সংখ্যা আরও অনেক বেশি। লজ্জার এই ঘটনা থেকে মুক্ত হতে চায় প্রশাসন। সেই লক্ষ্যে মঙ্গলবার কন্যাশ্রী সেলের উদ্যোগে জেলায় প্রায় ৭০০ স্কুলকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত করে সচেতনতার পাঠ দেওয়া হয়েছিল। মহকুমা শাসক, বিডিও, বিদ্যালয় পরিদর্শকরা বিভিন্ন স্কুলে উপস্থিত ছিলেন। নাবালিকা বিয়ে থেকে ট্রাফিক ও প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর সচেতনতা, মোবাইল ব্যবহারে সতর্কতা, সামাজিক মূল্যবোধ প্রভৃতি বিষয়ের উপর আলোচনা হয়। পূর্ব মেদিনীপুরে ডিজে বক্সের রমরমা ব্যবহার এবং অনেক রাত পর্যন্ত মাইক ব্যবহারের বিরুদ্ধেও ছাত্রছাত্রীদের সামাজিক আন্দোলনে শামিল হওয়ার ডাক দেন জেলাশাসক।

    গত এক বছরে কোলাঘাটে ২৮টি বিদ্যালয়ে ৫০০এর বেশি মেয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে বলে বিধায়ক তথা মন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে দাবি করেন। তিনি আরও জানান, ১৩ বছরের মধ্যে তিনজন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, পূর্ব মেদিনীপুরের নানাপ্রান্তে এভাবেই স্কুলেছাত্রীরা ড্রপ আউট হচ্ছে। তাদের অধিকাংশ বিয়ে করছে। মন্ত্রীর বক্তব্য, আমরা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছি।

    স্কুল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবহার বেড়েছে। ১৮ বছরের আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে মোবাইলের অপব্যবহার। এনিয়েও মঙ্গলবার পড়ুয়াদের সতর্ক করা হয়। পুলিস সুপার বলেন, মোবাইল ব্যবহারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব নয়। অজানা লিঙ্কও খোলা চলবে না। কোনও অবস্থায় সাইবার অপরাধের ফাঁদে পা নয়। এদিন বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রীরা নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা ভার্চুয়াল মাধ্যমে শেয়ার করে। স্কুলে প্রার্থনার সময় শিক্ষকরা যাতে গরহাজির পড়ুয়াদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেন তা নিয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়। জেলাশাসক বলেন, নাবালিকা বিয়ের মতো একটা গ্লানি থেকে আমাদের ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সম্পদ। তাদের প্রকৃত বিকাশ হল আসল উন্নতি। এই লক্ষ্যে আমাদের প্রত্যেককে একযোগে কাজ করতে হবে। নাবালিকা বিয়ে সহ সামাজিক দায়বদ্ধতার কাজে এগিয়ে আসা পড়ুয়াদের আমরা ১৫ আগস্ট ও ২৬ জানুয়ারির মতো অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে পুরস্কৃত করব।
  • Link to this news (বর্তমান)