নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর: সামনেই পুজো। পুরকর্মীদের বোনাস দিতে হবে। অপরদিকে, এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, তার খরচও নেহাত কম নয়। অথচ বকেয়া কর আদায় হচ্ছে না মোটেই। ফলে মাথায় হাত উঠেছে পুরসভার আধিকারিকদের। জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর পুর এলাকায় বকেয়া পুরকরের পরিমাণ প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি হোল্ডিংয়ের বকেয়া করও অনেকটাই বেশি। পুর আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, পুরকর আদায়ের জন্য বিভিন্ন ওয়ার্ডে বিশেষ ক্যাম্প করা হয়েছে। সেই ক্যাম্পে পুরকর জমা পড়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনও বকেয়া করের পরিমাণ আকাশছোঁয়া। বকেয়া কর জমা না পড়ায় অস্বস্তিতে পুরসভা। কারণ পুজোর মাসে পুরকর্মীদের বেতন ছাড়াও বোনাস দেওয়া হয়ে থাকে। পুরসভার এক আধিকারিকদের কথায়, আবেদন করলে বকেয়া করের ইন্টারেস্টের উপর ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুরকর মিটিয়ে দেওয়ার জন্য মাইকিংও করা হচ্ছে। কিন্তু লাভ বিশেষ হয়নি।
মেদিনীপুর পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান বলেন, বকেয়া কর অনেকটাই বেশি। পুরসভা চালাতে খুব সমস্যা হচ্ছে। তাই এলাকার মানুষকে কর মিটিয়ে দেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। বকেয়া কর না মেটালে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কর না পেলে উন্নয়নের জন্য খরচ করা সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্রশাসনিক বৈঠকে এসে পুর এলাকা ঢেলে সাজানোর বার্তা দিয়েছেন। সেই মতো রাস্তা সংস্কারের পাশাপাশি পুর এলাকার বাসিন্দারা যাতে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পান, সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পুর এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ চলছে।
পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, পুজোর মাসে পুরসভার দরকার প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা। বহু আবাসন কর ফাঁকি দিচ্ছে। জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর শহরে ৪২ হাজার ৭৭১টি হোল্ডিং রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি হোল্ডিং রয়েছে ৩১১টি। কয়েক হাজার হোল্ডিংয়ের কর এখনও বকেয়া। পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, গত কয়েক বছরে পুরসভার খরচ বেড়েছে। পুর এলাকার একাধিক জায়গায় উন্নতমানের আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তায় উন্নত আলোর ব্যবস্থা হওয়ায় বিদ্যুৎ বিল বাড়ছে। পুরসভার কাজে গতি বাড়াতে একাধিক কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি, পুরসভা নিজের উদ্যোগে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করছে। এতেই লাফিয়ে বেড়েছে খরচ। কিন্তু, সে তুলনায় আয় না বাড়ায় হিমশিম অবস্থা। অথচ পুর এলাকায় এমন অনেক সম্পত্তি আছে, বছরের পর বছর ধরে যাদের কর আদায় করা যাচ্ছে না। কিছুটা ইচ্ছে করেই মালিকরা কর দিতে চাইছে না বলে জানা গিয়েছে। মেদিনীপুর শহরে এমন বহু বাড়ি আছে, যেখান থেকে দীর্ঘদিন সম্পত্তি ট্যাক্স আসছে না। এ নিয়ে পুরসভার তরফে নোটিস পাঠানো হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অবার সম্পত্তির হিসেবই ঠিকমতো হয়নি।
এদিন মেদিনীপুর পুর এলাকার বাসিন্দা সঞ্জীব চৌধুরী বলেন, কর দেওয়ার কথা অনেকেই মনে রাখেন না। কিন্তু করের টাকায় উন্নয়ন হয় সেটা সকলের মনে রাখা উচিত। পুরসভার উচিত কড়া পদক্ষেপ করা।