নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন রীতা দাসকে অপসারণের মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা পার হয়েছে। এরই মধ্যে শহরের নাগরিক পরিষেবার অচলাবস্থা নিয়ে পুরসভাকে কড়া চিঠি পাঠাল পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তর। পাশাপাশি, সকল কাউন্সিলারকে শোকজ করে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন পুরবোর্ড ভাঙা হবে না। সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সাতদিন সময় দেওয়া হয়েছে। চেয়ারপার্সনকে অপসারণের আবহে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের এই চিঠি ঘিরে রাজনৈতিক মহলে শোরগোল পড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, দলের নির্দেশ উপেক্ষা করেই চেয়ারপার্সনকে অপসারণের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৃণমূলের ১৩ জন সহ ১৫ জন কাউন্সিলার। তার জেরে এবার ২৪ জন জনপ্রতিনিধির কাউন্সিলার পদ থাকা নিয়ে আশঙ্কা দেখা গিয়েছে। আবার অনেকেই মনে করছেন, পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের এই চিঠি প্রশাসক বসানোর প্রাথমিক পদক্ষেপ।
কৃষ্ণনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন রীতা দাস বলেন, ‘দপ্তর থেকে চিঠি এসেছে। শীঘ্রই সেই চিঠির জবাব দেব। চেয়ারপার্সনের বিরোধী কাউন্সিলার মলয় দত্ত বলেন, ‘চেয়ারপার্সন নিজের ওয়ার্ডে কাজ করেন। তার প্রতিবাদেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিই। আমরাও চিঠির জবাব দিতে তৈরি।’ বিজেপি কাউন্সিলার বর্ণালী গুইনদত্ত বলেন, ‘তৃণমূল নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে নাগরিকরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। অবিলম্বে এই অচলাবস্থা না কাটলে শহরবাসী ঘোরতর সঙ্কটে পড়বেন।’ কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, ‘সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই চূড়ান্ত।’
মঙ্গলবার বেলায় পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের ওই চিঠি এসে পৌঁছয় কৃষ্ণনগর পুরসভায়। সেই চিঠিতে কৃষ্ণনগর পুরসভার অচলাবস্থা নিয়ে বোর্ড অফ কাউন্সিলারকে কার্যত তুলোধোনা করা হয়েছে। চিঠির শুরুতেই ‘পুর পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে ভেঙ্গে পড়া’ এবং ‘নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বন্ধ’ হওয়ার অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়। যা নিয়ে দপ্তরের কাছে শহরের বাসিন্দাদের থেকে মাস-পিটিশন জমা পড়েছে বলে জানানো হয়েছে। তৃণমূলের কাউন্সিলারদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে গত ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে কৃষ্ণনগর পুরসভায় সেভাবে বোর্ড মিটিং হয়নি। তার জন্য নগরোন্নয়ন দপ্তর চিঠিতে, নির্বাচিত কাউন্সিলারদের অসহযোগিতার অভিযোগের কথা জানিয়েছেন। বোর্ড মিটিং না হওয়ায় বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন, সম্পত্তি কর সংগ্রহ, নিকাশি ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক পরিষেবা নিয়েও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। পাশাপাশি চিঠিতে বলা হয়েছে, কৃষ্ণনগর পুরসভা নিকাশি পরিস্কার, আবর্জনা অপসারণ, শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ নিষ্পত্তির মতো মৌলিক পরিষেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকী নজরদারির অভাবে কর্মীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। ভেন্ডাররা সময়মতো অর্থ পাচ্ছেন না বলে জানানো হয়েছে। চলতি অর্থ বছরের সাত মাস অতিক্রান্ত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত পুরসভার বাজেট চূড়ান্ত হয়নি। এই বাজেট অধিবেশন নিয়ে জলঘোলা চলাকালীন চেয়ারপার্সনের বিরোধী গোষ্ঠীর তরফ থেকে দুর্নীতির আশঙ্কা করে পুরসভার কাজের বিল পেমেন্ট করা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল।
নগরোন্নয়ন দপ্তর চিঠিতে সাফ জানিয়েছে, শহরবাসীর ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা দিতে পুরসভার ব্যর্থতা এটাই প্রমাণ করে যে, বোর্ড অফ কাউন্সিলাররা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা দেখিয়েছেন। যার ফলে কৃষ্ণনগর পুরসভা কার্যত অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। - নিজস্ব চিত্র