নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া ও সংবাদদাতা, মানবাজার: দেওরের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুনের অভিযোগ পুরুলিয়ার মানবাজারে। যা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে ওই এলাকায়। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মানবাজারের ঘাসতোড়িয়ার বাসিন্দা উত্তম সিং সর্দার এবং তার বউদি জ্যোৎস্না সিং সর্দারকে গ্রেপ্তার করেছে মানবাজার থানার পুলিস। মঙ্গলবার ধৃতদের পুরুলিয়া জেলা আদালতে তোলা হয়। ধৃতদের মধ্যে উত্তমের তিনদিনের পুলিসি হেফাজত, এবং জ্যোৎস্নার ১৪ দিনের জেল হেফাজত মঞ্জুর করেছেন বিচারক।
সোমবার সকালে মানবাজার থানার ঘাসতোড়িয়া গ্রামের একটি জলাশয় থেকে পেশায় দিনমজুর গৌতম সিং সর্দার (৩৫) নামের এক যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিস। প্রথমে নেহাতই জলে ডুবে মৃত্যু বলে মনে হলেও মৃতের গলায় দাগ দেখে সন্দেহ হয় পুলিসের। তারা দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পুরুলিয়া মেডিক্যালে পাঠায়। পাশাপাশি একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে। এদিকে, সোমবার রাতে মানবাজার থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের দিদি বোরো থানার ব্রজরাজপুরের বাসিন্দা আদরি সিং সর্দার। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর ভাইকে খুন করে জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদরি সিংয়ের অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিস। তদন্তে নেমে প্রথমেই মৃতের ভাই উত্তম সিং সর্দার এবং স্ত্রী জ্যোৎস্না সিং সর্দারকে আটক করে পুলিস। পুলিস সূত্রের দাবি, টানা জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই এক সময়ে ভেঙে পড়ে। খুনের বিষয়টিও কার্যত মেনেই নেয় দুজনে। এরপরেই পুলিস দুজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিস সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগেই গৌতমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল জ্যোৎস্নার। জ্যোৎস্নার বাড়ি গৌতমের দিদি আদরির বাড়ির কাছাকাছি এলাকাতেই। পুলিসের একটি সূত্রের দাবি, বিয়ের বহু আগে থেকেই জ্যোৎস্নার সঙ্গে গৌতমের ভাই উত্তমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। যদিও সেই সম্পর্ক পরিণতি পায়নি। বদলে জ্যোৎস্নাকে বিয়ে করেন উত্তমের দাদা গৌতম। তাছাড়া, বিয়ের সময় জ্যোৎস্না ও উত্তম দুজনেই নিজেদের প্রেমের সম্পর্কের কথা বেমালুম চেপে গিয়েছিল। তবে, বিয়ের পরেও দুজনের অবৈধ প্রেম চলতে থাকে। সেই পুরনো প্রেমের ব্যাপারটি সম্প্রতি জানতে পেরে গিয়েছিলেন গৌতম। এ নিয়ে পরিবারে তুমুল অশান্তি শুরু হয়। প্রায়শই স্ত্রী জ্যোৎস্নাকে মারধর করতে থাকে গৌতম। দাদা-ভাইয়েও তুমুল অশান্তি, মারপিট শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে পথের কাঁটাকে চিরতরে সরিয়ে ফেলতে দেওর ও বউদি মিলে গোপনে পরিকল্পনা করতে থাকে। সেইমতো রবিবার দুজনে মিলে প্রথমে গলায় ফাঁস দিয়ে খুন করে গৌতমকে।
পুলিস সূত্রের খবর, দেহটি রবিবার দুপুরে খুন করে লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর রাতের অন্ধকারে দেহটি জলে ফেলে দেওয়া হয়। এমনভাবে দেহটি জলে ফেলে দেওয়া হয়, যাতে দেখে সাধারণ মৃত্যু বলে মনে করে লোকজন। তবে, দু›জনে মিলে কীভাবে এই খুন করল, তা এখনও জানতে পারেনি পুলিস। তারা উত্তমকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তা বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করছে। ধৃতরা। -নিজস্ব চিত্র