• রক্তদান কর্মসূচি বড় সমাজসেবা, নেতাদের দুয়ারে স্বাস্থ্য প্রতিনিধিরা
    বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: ‘স্যার, আপনারা সমাজসেবী, মানুষের কথা ভাবেন, এখন ব্ল্যাডব্যাঙ্ক শূন্য, একটা রক্তদান শিবির করুন প্লিজ’। চিঠি হাতে এমনই বার্তা নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মীরা। মঙ্গলবার কয়েকজন কর্মীকে নিয়ে জেলা পরিষদের আসেন ব্লাড ব্যাঙ্কের আধিকারিক দেবকুমার প্রমাণিক। রক্তদান শিবির করার জন্য তিনি কার্যত হাতজোড় করে কর্মাধ্যক্ষদের কাছে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, প্রায় ১৫ দিন ধরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক রক্তাল্পতায় ভুগছে। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন। তাঁদের জন্য প্রতিদিন আলাদাভাবে রক্ত মজুত করতেই হয়। তাছড়া হসপাতালে সঙ্কটজনক রোগী রয়েছেন। তাঁদের জরুরি ভিত্তিতে রক্ত জোগান দিতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। রক্তদান শিবির না হওয়ার জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। 

    ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মী এবং আধিকারিকরা এদিন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু কোনারের অফিসে হাজির হয়েছিলেন। তাঁকে তাঁরা রক্তদান শিবির করার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে এত বেশি রক্তের সঙ্কট চলছে, তা আগে জানতে পারিনি। খুব তাড়াতাড়ি শিবিরের আয়োজন করছি।

    ব্লাডব্যাঙ্কের কর্মীরা হাজির হয়েছিলেন সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহারের অফিসেও। তিনি বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই জেলা পরিষদের এই বোর্ডের দ্বিতীয় বছর পূর্ণ হবে। ওই দিন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের সদস্যদের পাশাপাশি যে কেউ এখানে এসে রক্তদান করতে পারেন। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি কয়েকটি রক্তদান শিবিরের আয়াজন করা হয়েছে। রক্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে না দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয়েছে। কার্ড না থাকলে রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নিতে পারেন না। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে দালালরা। তারা দেড় থেকে দু’হাজার টাকার বিনিময়ে এক বোতল রক্ত দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এত দাম দিয়ে অনেকেরই রক্ত কেনার ক্ষমতা নেই। তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। 

    জেলা পরিষদের সভাধিপতি বলেন, আমি নিজে অনেকবার রক্ত দিয়েছি। শরীরে কোনও সমস্যা হয়নি। উল্টে রক্ত দেওয়ার পর শরীর ফ্রেশ মনে হয়েছে। কিন্তু অনেকেরই রক্তদান নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। তাঁরা ভয়ে রক্তদান করেন না। এই ধারণায় বদল আনা দরকার। 

    স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য হাসপাতালগুলির তুলনায় বর্ধমানে রক্তের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের রোগীরাও এখান চিকিৎসার জন্য আসেন। সেই কারণে রক্তের চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছে। তুলনায় ক্যাম্প হচ্ছে না। অনেক রোগীর পরিবার ডোনার জোগাড় করতে পারেন না। বিশেষ করে বাইরে থেকে যাঁরা চিকিৎসা করাতে আসেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি হয়। ‘রাজনৈতিক সমাজসেবী’রা সচেতন না হওয়ায় ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা অবশেষে বাধ্য হয়ে পথে নেমেছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)