কড়ি ফেললেই মাধ্যমিক থেকে বিএড, ফার্মাসিস্টের সার্টিফিকেট, তমলুকে আলোড়ন
বর্তমান | ৩০ জুলাই ২০২৫
শ্রীকান্ত পড়্যা তমলুক
টাকা ফেললেই মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক থেকে বিএড এবং ফার্মাসির সার্টিফিকেটও পাওয়া যাচ্ছে। তমলুক ব্লকের একটি কম্পিউটার সেন্টার যেন সার্টিফিকেট বিক্রির দোকান। তমলুক, পাঁশকুড়া, ময়না ও কোলাঘাটে অন্তত ১০জন এজেন্ট নিয়োগ করে খদ্দের জোগাড় করা চলছে। লক্ষ টাকার বিনিময়ে ফার্মাসির সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। সেই সার্টিফিকেট নিয়ে দেদার ওষুধের দোকান খোলা হচ্ছে। তমলুক ব্লকের দু’টি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে দীর্ঘদিন ধরে রমরমিয়ে ওই ব্যবসা চলছিল। একটি সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু অন্য সেন্টার থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও ঝাড়খণ্ডের একাধিক ইউনিভার্সিটির নামে সার্টিফিকেট বিক্রি চলছে। সম্প্রতি এনিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। জেলা যুবকল্যাণ দপ্তরের অফিসার বংশীধর ওঝা বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
ওই কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার সরকারি অনুমোদন নিয়ে চলছে। কিন্তু, কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণের জন্য আর ভিড় নেই। বরং এখানে টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রি চলছে। প্রতিটি সার্টিফিকেটের দর আলাদা। এজেন্টরা খদ্দের খুঁজে দেওয়ার বিনিময়ে কমিশন পাচ্ছেন। মাধ্যমিক পাশের সার্টিফিকেট পেতে দিতে হবে ২২-২৫হাজার টাকা। উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট জোগাড় করতে খসাতে হবে ৩২-৩৫হাজার টাকা। এছাড়া বিএ পাশ মার্কশিট ও সার্টিফিকেটের দর ৪০থেকে ৪৫হাজার টাকা, বিএসসির দর ৬০হাজার, বি-কমের মার্কশিট ও সার্টিফিকেটের মূল্য ৬০হাজার টাকা। ২লক্ষ ৮০হাজার টাকার বিনিময়ে মিলছে ডিএলএড সার্টিফিকেট। ৩লক্ষ ২০হাজার টাকা দিলেই মিলবে বিএডের সার্টিফিকেট। ফার্মাসি সার্টিফিকেটের দর ৩ লক্ষ ৮০হাজার টাকা।
ময়না থানার গুরাইখালি, অন্নপূর্ণা বাজার, তমলুক থানার শ্রীরামপুর, শ্রীরামপুর বটতলা, মদনমোহনচক ও পাঁশকুড়া স্টেশন এলাকায় এজেন্ট নিয়োগ করে সার্টিফিকেট বিক্রির খদ্দের জোগাড় করা হচ্ছে। এজেন্ট হিসেবে দু’-একজন শিক্ষকও কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গিয়েছে, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের অনেকেই এখান থেকে ফার্মাসি সার্টিফিকেট জোগাড় করে ওষুধ দোকান খুলেছেন। ওই ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রায় দেড় হাজার ফার্মাসি সার্টিফিকেট বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছে প্রশাসন।
গত দু’বছর পোস্টাল বিভাগের তমলুক ও কাঁথি ডিভিশন থেকে প্রায় আটজন সাব পোস্ট মাস্টারের চাকরি বাতিল হয়েছে। ভিনরাজ্যের বোর্ড থেকে মাধ্যমিকে ৯৬-৯৯শতাংশ নম্বর সহ মার্কশিট ও সার্টিফিকেট দেখিয়ে তারা ডাকবিভাগে নিয়োগপত্র পেয়েছিল। চাকরি পাওয়ার পর তাদের মার্কশিট ভেরিফিকেশনে দেখা যায়, ওইসব বোর্ড ভুয়ো। প্রত্যেকেই টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট কিনেছিল। তাঁরা প্রত্যেকে ঝাড়খণ্ড ও উত্তরপ্রদেশের অনুমোদনহীন বোর্ডের মাধ্যমিক পাশ সার্টিফিকেট ও মার্কশিট জমা দিয়েছিল। এভাবে নন্দকুমার থানার বড়গোদার ছায়া দাস, ময়না থানার আনন্দপুর গ্রামের প্রহ্লাদ মাইতি, নন্দীগ্রাম থানার বিরুলিয়া পঞ্চায়েতের হানুভুঁইয়া গ্রামের কৃষ্ণেন্দু রায়, পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের সায়ন চন্দ অনুমোদনহীন অন্য রাজ্যের বোর্ডের মাধ্যমিক মার্কশিট জমা করে ডাক বিভাগে এক বছর চাকরি করার পর সেই কাজ খুইয়েছেন। নিকাশির ওই ট্রেনিং সেন্টারের মতো বিভিন্ন জায়গা থেকে সার্টিফিকেট কিনে ঠকে গিয়েছে।
তমলুক ব্লকের ওই কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের কর্ণধার বলেন, আমরা ইচ্ছুক যুবক-যুবতীদের ভিনরাজ্যের নানা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাই। কোর্স ফি বাবদ টাকা জমা করেন। তাঁরা পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট জোগাড় করেন। এখান থেকে কাউকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না।