‘যা বলেছিলাম, তা-ই হয়েছে, কে সত্যি, কে মিথ্যা প্রমাণ হবে!’ শিশুনিগ্রহ কাণ্ডে দিল্লি পুলিশকে নাম না-করে চ্যালেঞ্জ মমতার
আনন্দবাজার | ২৯ জুলাই ২০২৫
সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, দিল্লিতে কাজ করতে যাওয়া বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের মা ও শিশুকে নির্মম ভাবে পিটিয়েছে দিল্লি পুলিশ। বোলপুরের সভা থেকেও একই অভিযোগ করেছিলেন মমতা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য খণ্ডাতে সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করেন দিল্লি পুলিশের ডিএসপি (পূর্ব) অভিষেক ধনিয়া। মঙ্গলবার ইলামবাজারের সরকারি কর্মসূচি থেকে পাল্টা দিল্লি পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘আমি কালকে (সোমবার) ওই বাচ্চাটার কথা বলেছিলাম। একটার পর একটা থানায় ওদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি কালকেই মিটিংয়ে বলেছিলাম। রেকর্ড চেক করুন। বলেছিলাম ওদের থ্রেট করা হবে। হয়েছে সেটাই। আমরা চাইব, তাঁরা (‘আক্রান্ত’রা) যাতে ফিরে আসেন। আর কে সত্যি, কে মিথ্যা তা প্রমাণ হয়ে যাবে।’’
মমতার পোস্ট করা ভিডিয়ো এবং সভায় করা দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাভাষীদের উপর আক্রমণ নিয়ে বিজেপি-র বিরুদ্ধে সুর চড়াতে শুরু করে তৃণমূল। তবে দিল্লির পুলিশকর্তা সাংবাদিক বৈঠকে জানান, মমতা ভিডিয়ো পোস্ট করতেই তদন্ত শুরু করা হয়েছিল। কী জানা গিয়েছে, তার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অভিষেক জানান, ওই ভিডিয়োতে থাকা মহিলার পরিচয় জেনে তাঁর বাড়িতে যান তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই মহিলা জানান, ২৬ জুলাই রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সাদা পোশাকে দিল্লি পুলিশের চার জন কর্মী তাঁদের বাড়িতে আসেন এবং তাঁদের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরে তাঁদের থেকে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন ওই পুলিশকর্মীরা। মারধরও করা হয়। দিল্লি পুলিশের এ-ও দাবি, মহিলার এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
দিল্লি পুলিশের ডিএসপি (পূর্ব) অভিষেক জানান, পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ঘটনার তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়। প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ঘটনার সত্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ। ওই মহিলাকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় তিনি স্বীকার করেন, মালদহে তাঁর এক আত্মীয় রয়েছেন, যিনি এক জন রাজনৈতিক কর্মী। তাঁর কথাতেই ওই ভিডিয়ো তৈরি করেছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন ওই মহিলা। পরে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিষেকের কথায়, ‘‘দিল্লি পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই ইচ্ছাকৃত ভাবে ভিডিয়োটি সমাজমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’
দিল্লি পুলিশের বক্তব্যকে হাতিয়ার করে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে বলে জানান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি সৌমেন্দুকে (শুভেন্দুর ভাই তথা কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী) বলেছি, থানায় অভিযোগ দায়ের করতে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে কটাক্ষ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা খবর ছড়াচ্ছেন। তিনি গুজব রটানোয় আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেতে পারেন।’’
মঙ্গলবার দিল্লির মন্দির মার্গ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সৌমেন্দু। বিজেপি সাংসদ বলেন, “মালদহের এক মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ভুয়ো ছবি পোস্ট করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের চেষ্টা করছেন। সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেই আমি মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দিল্লিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি ।”
শুভেন্দুর সাংবাদিক বৈঠকের পিঠোপিঠি সময়েই বীরভূম থেকে নাম না-করে দিল্লি পুলিশকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন মমতা। উল্লেখ্য, মমতা পশ্চিমবঙ্গের পুলিশমন্ত্রীও বটে। আবার দিল্লি পুলিশ অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে, যাকে অনেকেই শাহের সঙ্গে মমতার সংঘাত হিসাবে অভিহিত করছেন।