অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। মঙ্গলবার বীরভূমের ইলামবাজারে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান থেকে অজয় নদের উপর নির্মিত জয়দেব সেতুর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমের জয়দেব এবং পশ্চিম বর্ধমানের বিদবিহারের অজয় নদের উপর স্থায়ী সেতু তৈরি হওয়ার ফলে পশ্চিম বর্ধমান ও বীরভূমের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতির পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মধ্যেও যোগাযোগের পথ সুগম হল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে কাঁকসার একটি অনুষ্ঠানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নতুন সেতু তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জমিজট-সহ বিভিন্ন কারণে সেতু নির্মাণে বেশ কিছুটা সময় লাগলো। সেতুটি শিবপুর এলাকায় শুরু হয়ে ইলামবাজারের টিকরবেতায় শেষ হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ২.৭৩ কিলোমিটার। খরচ হয়েছে ১৩৭ কোটি টাকা। ইলামবাজার হয়ে দুর্গাপুর-মুচিপাড়া যেতে হলে কমপক্ষে ২৫ কিলোমিটার রাস্তা বেশি যেতে হত। এই সেতুর ফলে মুচিপাড়া-শিবপুর রাস্তা ধরে শান্তিনিকেতন যাওয়ার দূরত্ব প্রায় ২২ থেকে ২৫ কিলোমিটার কমল। এদিনই এই সেতু দিয়ে চালু হল দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের দুর্গাপুর-সিউড়ি রুটের বাস। শিবপুর থেকে এদিন এই বাস পরিষেবা চালুর কথা জানান এসবিএসটিসির চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল। সংশ্লিষ্ট সেতুর নামকরণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগে অজয় সেতু ছিল, এবার আরও এক নতুন সেতু অর্থাৎ একটা নতুন পালক জুড়ল। জয়দেব নামে সেতুর নাম হলে স্থানীয় মানুষের আবেগ জড়াবে। এই সেতু ধরে জয়দেবের মেলায় আসতেও মানুষের সুবিধা হবে।’
পাশাপাশি রাজ্যে প্রথম জলাধারভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পেরও সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। বক্রেশ্বর জলাধারের মধ্যে স্থাপিত এই প্রকল্পের উদ্বোধন করে মমতার দাবি, ‘এই প্রকল্প রাজ্যে প্রথম। জলাধারের মধ্যেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই উদ্যোগ খরচ কমাবে, পরিবেশবান্ধবও বটে।’ তিনি জানান, এই প্রকল্প সফল হলে রাজ্যের অন্যান্য জলাধারেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। প্রশাসনিক কর্তাদের তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
একই মঞ্চ থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ১ হাজারেরও বেশি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। মোট ব্যয় প্রায় ১,১৪২ কোটি টাকা। জয়দেব সেতু এবং তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প ছাড়াও মালদহে পাঁচটি নতুন সেতু, সিউড়ি জেলা হাসপাতালে হাইব্রিড সিসিইউ, বসিরহাটে ডায়লিসিস ইউনিট, ডায়মন্ড হারবারে লালপোল সেতু, রাস্তা ও পানীয় জলের প্রকল্প, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুলের ক্লাসরুম, কমিউনিটি হল এবং ফুটবল মাঠ-সহ একাধিক প্রকল্পের সূচনা করেন তিনি। পানীয় জলের ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্প নিয়েও কেন্দ্রের উদ্দেশে কড়া ভাষায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘৯০ শতাংশ টাকা এবং জমি দেয় রাজ্য, অথচ কেন্দ্র তাদের ৪০ শতাংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও রাখে না।’ তাই সাংসদ ও বিধায়কদের নিজ নিজ এলাকা থেকে তহবিল দিয়ে পিএইচই বিভাগকে সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে মুখ্যসচিবকে প্রকল্পগুলির অগ্রগতি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেন্দ্র টাকা না দিলেও আমরা মানুষকে অসুবিধার মধ্যে ফেলব না। কাজ করে যাব।’
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গ তুলে ‘বাংলার বাড়ি’র হিসাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘এই বছর ১২ লক্ষ বাড়ির জন্য অর্থ দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে আরও ১৬ লক্ষ পরিবার প্রথম কিস্তির টাকা পাবে। দ্বিতীয় কিস্তি তারা পাবে মে মাসে। এই ২৮ লক্ষ বাদে যারা রয়ে যাবে, তাদের ধাপে ধাপে সমীক্ষা করে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে দেওয়া হবে।’ দেউচা পাঁচামিতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সেই সঙ্গে ২ আগস্ট থেকে যে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ ক্যাম্প শুরু হচ্ছে, তাও আর একবার স্মরণ করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন, ‘এরপর দুয়ারে সরকার ক্যাম্পও হবে।’