• দুই কর্মসূচি একই সময়ে রাজ্যে, আশঙ্কা সংঘাতের
    আনন্দবাজার | ৩০ জুলাই ২০২৫
  • যে সময়ে এ রাজ্যে ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনের কাজ চলার কথা, ঠিক সেই সময়েই রাজ্য জুড়ে ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ কর্মসূচি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। প্রায় একই সময়ে দু’টি কাজের এই সংঘাত নিতান্তই ঘটনাচক্রে কি না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে আধিকারিক মহলে। তাঁদের অনুমান, কমিশনের কাজে নজরদারির উদ্দেশ্যও সময় নির্বাচনের নেপথ্যে কাজ করে থাকতে পারে। আবার দুই কাজে যুক্ত একই আধিকারিকদের নিয়ে জাতীয় নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্যের মধ্যে দড়ি টানাটানির পরিস্থিতি তৈরি হলে সর্বস্তরের আধিকারিকদের সামনে তা কার্যত উভয় সঙ্কটই। ‘শ্যাম-কুল’ রক্ষার এই কাজে কার ঘাড়ে কোন পক্ষেরখাঁড়া নেমে আসবে, সেই আশঙ্কাও থেকেই যাচ্ছে।

    সব ঠিক থাকলে এ রাজ্যে নিবিড় সংশোধনের কাজ শুরু হওয়ার কথা অগস্টে। ঘটনাচক্রে, ২ অগস্ট থেকে সরকারি পাড়া-কর্মসূচিও শুরু হবে। এর সঙ্গে দুয়ারে সরকার ধরলে নবান্নের কাজ ৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। নবান্নের নির্দেশ— ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব পরিষেবা দিতে হবে। অন্য দিকে কমিশনের লক্ষ্য, সংশোধনের নিরিখে খসড়া ভোটার তালিকা নভেম্বরের মাঝামাঝি প্রকাশ করা। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ পাওয়ার কথা সেই জানুয়ারিরই প্রথম সপ্তাহে। অর্থাৎ কমিশন তাদের কাজ অগস্ট-সেপ্টেম্বরে শুরু করলে রাজ্যের কর্মসূচির সঙ্গে তার সংঘাত অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করছেন আধিকারিকদের বেশির ভাগই।

    সময় নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের একটি অংশের অনুমান— একসঙ্গে দু’টি কাজ হলে সংশোধন-প্রক্রিয়ার তথ্য কমিশনের পাশাপাশি জানতে পারবেন রাজ্য প্রশাসনের ঊর্ধ্বতনেরাও। তাতে এলাকায় এলাকায় সেই নজরদারি রাখা সহজ। কারও নাম বাদ যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে, তা সামাল দেওয়ার চেষ্টাও হতে পারে। গত ২১ জুলাইয়ের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, তালিকা থেকে একটি নাম বাদ গেলে ফল তো ভাল হবে না। ফলে পাড়া-কর্মসূচির সময় ভেবে-চিন্তেই বাছা হয়েছে। কিন্তু এতে ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন আধিকারিকদের অনেকে।

    রাজ্যের কর্মসূচিতে বিডিও, এসডিও, অতিরিক্ত জেলাশাসক (এডিএম) এবং জেলাশাসকদের যুক্ত হতে হচ্ছে। আবার কমিশনের হয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ তাঁদেরই করার কথা। অভিজ্ঞ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, নির্বাচনী কোনও কাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আইনের আওতায় সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা তখন কমিশনের অধীনে (ডেপুটেশন) চলে আসেন। নিবিড় সংশোধনের জটিল সেই প্রক্রিয়ার কারণে অন্য কাজে যুক্ত হওয়া তাঁদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। আবার কোনও ভুল-ভ্রান্তির দায় বর্তাবে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের উপরেই। তেমন পরিস্থিতিতে রিপ্রেজ়েন্টেশন অব পিপলস আইন অনুযায়ী কমিশন কড়া পদক্ষেপ করলে, সেই আধিকারিকের কর্মজীবনে স্থায়ী ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যায়। ফলে কমিশনের নির্দেশ সরাসরি উপেক্ষা করা কার্যত অসম্ভব। আবার সাধারণ সময়ে রাজ্য সরকারের অধীনে থাকেন এই আধিকারিকেরাই। ফলে রাজ্যের ৮০ হাজার বুথে মানুষের মন বোঝার যে দায়িত্ব তাঁদের উপরে বর্তেছে, তা পালনেও বাধ্য তাঁরা। কমিশনের চাপে রাজ্যের কাজে ন্যূনতম ফাঁক পেলে নবান্নের কোপও এড়ানো মুশকিল।

    এক জেলা-কর্তার কথায়, “ভোটার তালিকায় বাংলাদেশি নাম, ভুয়ো নামের উপস্থিতি নিয়ে এমনিতেই পরিস্থিতি গরম। গাফিলতি থাকায় ইতিমধ্যেই কমিশন তিন জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। দোষ প্রমাণিত হলে তাতে জেল পর্যন্ত হতে পারে।” অপর এক কর্তা বলেন, “এ বারের সংশোধনী প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক ভোটারের তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে নথিবদ্ধ হবে। নতুন কার্ডের ক্ষেত্রেও তাই। কোনও ত্রুটি হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে চিহ্নিত করা খুব সহজ। কমিশন ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, গাফিলতি ধরা পড়লে তারা রেয়াত করবে না। একই আশঙ্কা রাজ্যের দিক থেকেও রয়েছে।”

    এ রাজ্যে আগামী ২৫ জুলাই থেকে ১০ দিনপাড়া কর্মসূচি সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন নিয়ে পথে নামবে সিপিএম। তাদের বক্তব্য, এটা সাংবিধানিক ব্যবস্থারও পরিপন্থী। সরকারের সর্বনিম্ন স্তর ‘বুথ’ নয়, সেটা নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন। সরকারের কাজের জন্য আছে পঞ্চায়েত এবং পুরসভা। কাজের জন্য জবাবদিহির দায়ও তাদের রয়েছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এটা সরকারি টাকায় তৃণমূলকে পোষার প্রকল্প।’’ তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের অবশ্যজবাব, ‘‘সময়ের সঙ্গে এই রকম প্রকল্পের মাধ্যমে পরিষেবাকে নিশ্চিত করা তো ইতিবাচক।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)