বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: আনাজপাতি থেকে মাছ, মাংস— দামের ঝাঁঝে এমনিতেই নাজেহাল সাধারণ মানুষ। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিতে অনেকটাই লাগাম পরানো গিয়েছে। রোজকার অভিজ্ঞতা অবশ্য একেবারে উল্টো। অগ্নিমূল্যের বাজারে গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সবরকমের ভোজ্য তেলের দর। বাঙালির প্রিয় সর্ষের তেলের দাম রকেট গতিতে ঊর্ধ্বমুখী। খুচরো বাজারে কেজি প্রতি তা কোথাও বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, কোথাও আবার ২১০ টাকায়। কেন্দ্রের তথ্যই বলছে, পশ্চিমবঙ্গে এক বছরে কেজি প্রতি তেলের দাম বেড়েছে ৫০ টাকার বেশি। সামান্য সস্তা প্যাকেট বা শিশিতে বন্দি লিটার পিছু সর্ষের তেল। কিন্তু সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিচ্ছে না সেই দর!
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার সর্ষের উৎপাদন কম। সেটা দাম বৃদ্ধির একটি কারণ হতে পারে। এদেশে সিংহভাগ পাম তেল আমদানি করা হয় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ড থেকে। ২০২৫ সালের প্রথম ছ’মাসে মালয়েশিয়া থেকেই এসেছে মোট আমদানির ৩৫ শতাংশ। সূর্যমুখী বা সয়াবিন তেল আসে ব্রাজিল, ইউক্রেন, রাশিয়া বা আর্জেন্টিনা থেকে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে সেই তেলের দাম বাড়লে, এদেশেও প্রভাব পড়ে। সয়াবিন বা পাম তেলের দর বেড়ে গেলে, বাজারের চাহিদা ও জোগানের নিজস্ব নিয়মে মহার্ঘ হয় সর্ষের তেলও। আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দর বেড়ে যাওয়া গোটা পরিস্থিতির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন অনেকেই। কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায়। যেভাবে গত এক বছর ধরে লাগাতার রান্নার তেলের দাম বেড়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার তাতে পদক্ষেপ করছে না কেন? ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ভোজ্য তেলের উপর ২০ শতাংশ বেসিক কাস্টমস ডিউটি চাপায় কেন্দ্র। গত মে’তে তা ১০ শতাংশ কমানো হয়। কিন্তু যেভাবে দাম বাড়ছে, সেই তুলনায় ওই কর ছাড় কিছুই নয় বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। কারণ, এক বছরের তুলনায় অন্যান্য ভোজ্য তেলের দরও বেড়ে গিয়েছে কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা।
বাংলায় খুচরো বাজারে সর্ষের তেলের দাম ২১০ টাকায় পৌঁছেছে। যদিও কেন্দ্রীয় ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রকের তথ্য বলছে, এরাজ্যে গড় দর কিলো পিছু বর্তমানে ১৮৫ টাকা ৩০ পয়সা। দেশের নানা প্রান্তে সর্ষের তেলের দর আরও চড়া। ত্রিপুরায় তা ২০০ টাকা ছুঁইছুইঁ। তামিলনাড়ুতে ১৯৬ টাকা ৪০ পয়সা, ওড়িশায় ১৯২ টাকা ৬০ পয়সা, সিকিমে ২০০ টাকা ৫০ পয়সা, দিল্লিতে দর ২০৫ টাকা, কেরলে ২১২ টাকা ২০ পয়সা। পোস্তা বাজার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্তা বিশ্বনাথ আগরওয়ালের কথায়, দেশে এবার সর্ষের উৎপাদন কম হওয়ায় প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে পাইকারি বাজারে তেলের দর ওঠানামা করছে ঘনঘন। অন্যান্য ভোজ্য তেল আমদানি করে দেশের পাঁচ-ছ’টি বড় সংস্থা। তাদের হাতেই থাকে বাজারের নিয়ন্ত্রণ। ভোজ্যতেল ব্যবসার অন্যতম সংগঠন সলভেন্ট এক্সট্র্যাক্টর অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, এবার সর্ষের উৎপাদন হতে পারে ১১৫ লক্ষ টন। গতবারের তুলনায় তা ১৩ শতাংশ কম। ফলে দাম বৃদ্ধির হাত থেকে এখনই রেহাই মেলার কোনও সম্ভাবনা নেই!