ভিন্ন নামে একাধিক পাসপোর্ট, কোন অভিসন্ধিতে শিলিগুড়িতে চিনা যুবক! তদন্তে গোয়েন্দারা
প্রতিদিন | ৩০ জুলাই ২০২৫
অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: ভারত-নেপাল সীমান্ত এলাকায় এক চিনা যুবককে গ্রেপ্তার করেছে এসএসবি জওয়ানরা। পরে খড়িবাড়ি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ধৃতকে পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। ওই চিনা যুবকের আচরণ, গতিবিধি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। ওই চিনা যুবক কি তথ্য পাচারের কাজে জড়িত? চর হিসেবে তথ্য জোগাড় করে কি পাচারের জন্যই সে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছিল? সেই প্রশ্নও উঠেছে। ধৃত যুবককে পুলিশ ও গোয়েন্দারা ধারাবাহিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে খবর।
বাংলাদেশের হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে সীমান্তে সতর্ক বিএসএফ, এসএসবি। বেশ কয়েক মাস আগেও দুই অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ধৃতরা চরবৃত্তির সঙ্গে জড়িয়ে, তেমনই প্রাথমিক অনুমান করেছিলেন তদন্তকারীরা। সোমবার রাতে শিলিগুড়ি সংলগ্ন ইন্দো-নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কিতে নিরাপত্তায় থাকা এসএসবির ৪১ ব্যাটালিয়নের ‘সি’ কোরের বর্ডার ইন্টারঅ্যাকশন টিম নতুন ব্রিজ থেকে এক চিনা নাগরিককে আটক করে। তাঁর গতিবিধিও অত্যন্ত সন্দেহজনক বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ধৃতের থেকে দুটি ভিন্ন নামের সুইস পাসপোর্ট উদ্ধার হয়েছে। একটি পাসপোর্টে নাম রয়েছে খামরিতশাং সেতেন গুরমে। অপর পাসপোর্টে নাম রয়েছে সেঙ্গেইতসাং কর্মা জিমি। দুটি আলাদা নামে ভিন্ন পাসপোর্ট কেন বানানো হয়েছিল? আরও অন্য নামে কি জাল পাসপোর্ট ওই যুবকের আছে? সেই প্রশ্ন উঠে আসছে। এছাড়াও ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি জাল নেপালি নাগরিকত্বের কার্ড। নেপালে কোন উদ্দেশ্যে ছিল সে? নেপাল থেকে অবৈধভাবে পানিট্যাঙ্কির মেচি সেতু দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল সে! তাহলে কি এই দেশে ঢুকে চরবৃত্তি করাই উদ্দেশ্য ছিল ওই চিনা যুবকের?
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শিলিগুড়ির এই এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের এই অঞ্চলই ‘চিকেনস নেক’ হিসেবে পরিচিত। এই এলাকার উপর বরাবরই নজর থাকে চিন-সহ ভারতের শত্রুশিবিরের। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আবহে এই এলাকাও টার্গেটে ছিল বলে খবর। এই এলাকার সীমান্তে ভারতীয় সেনার সংখ্যাও বাড়ানো হয়। সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারি নির্দেশ দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গি ঢোকার আশঙ্কাও তিনি করেছেন। পুলিশ-প্রশাসনকে সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া আছে। সেই আবহেই প্রতিকূল আবহাওয়াউ এই চিনা যুবক শিলিগুড়ির ওই এলাকায় সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছিল। গ্রেপ্তারের পর ধৃতকে খড়িবাড়ি থানার পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল এসএসবি।
গতকাল, মঙ্গলবার আদালতে তোলা হলে ধৃতকে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। ওই যুবকের থেকে তথ্য পেতে পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও জেরা করছে বলে খবর। আর কোন দেশের নাগরিকত্ব আছে ওই যুবকের কাছে? এরপর কোথায় যেত সে? তথ্য জোগাড় করে কোথায় পাঠানোর কথা ছিল তার? সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত, এর আগে ১৩ অক্টোবর একই জায়গা থেকে এক চিনা নাগরিক ও এক ভারতীয় দালালকে গ্রেপ্তার করেছিল এসএসবি ও পুলিশ।