ন’মাস সময় লাগবে কবি সুভাষ স্টেশন মেরামত করতে: মেট্রো, সঙ্গে প্রতিশ্রুতি, নিত্যযাত্রীদের যাতায়াতে কোনও সমস্যা হবে না
আনন্দবাজার | ৩০ জুলাই ২০২৫
প্ল্যাটফর্মের পিলারে ফাটল ধরা পড়ায় নিউ গড়িয়া সংলগ্ন কবি সুভাষ স্টেশন পর্যন্ত মেট্রো চলাচল আপাতত বন্ধ। প্রাথমিক ভাবে অনুমান ছিল, বছরখানেক লেগে যেতে পারে প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ মেরামত হতে। কিন্তু বুধবার বিবৃতি দিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, প্ল্যাটফর্ম সম্পূর্ণ মেরামতের জন্য ন’মাসের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যেই আবার কবি সুভাষ পর্যন্ত যাত্রী পরিষেবা চালু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে মেট্রো। পাশাপাশি তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, নিত্যযাত্রীদের যাতায়াতে কোনও সমস্যা হবে না।
বুধবার সন্ধ্যায় আনন্দবাজার ডট কমে কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনে পিলারে ফাটল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। কবি সুভাষ স্টেশন আপাতত বন্ধ হয়ে যাওয়া যাত্রীদের বড় অংশ নানা সমস্যার মুখে পড়তে পারেন, এই মর্মে সেই প্রতিবেদন লেখা হয়। পাশাপাশি, কবি সুভাষ প্ল্যাটফর্মের পিলারে ফাটলের কারণ নিয়েও নানা সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে। তার মধ্যে একটি ছিল— ‘আনইভন সেটলমেন্ট’। অর্থাৎ, নির্মাণের কোনও এক দিক বসে গিয়েছে। বুধবার রাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ যে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন, তাতে সেই দিকেই ইঙ্গিত করা হচ্ছে। বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘মনে করা হচ্ছে, আনইভন সেটলমেন্টের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।’’
প্রসঙ্গত, আনন্দবাজার ডট কম-কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং (নির্মাণবিদ্যা)-এর অধ্যাপক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘‘এই ফাটল কিন্তু এক দিনে তৈরি হয়নি। একটা কংক্রিটের পিলারে নানা কারণে ফাটল তৈরি হতে পারে। অন্যতম কারণ হল ‘আনইভন সেটলমেন্ট’। অর্থাৎ, কোনও পিলার এক দিকে বেশি বসেছে। আর এক দিকে কম বসেছে। যে কারণে কলকাতা শহরে বিভিন্ন জায়গায় বাড়ি হেলে পড়ে। প্ল্যাটফর্মটিও হেলে পড়েছে কি না, সেটাও দেখা দরকার।’’ তাঁর ধারণা, নিয়মিত তদারকি বা রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। ফাটল আগেই তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি তা সকলের নজরে এসেছে। মেট্রো কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, তাঁরা নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করেন। চলে নজরদারিও।
কবি সুভাষ প্ল্যাটফর্ম আপাতত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন উত্তর-দক্ষিণ মেট্রো শাখার দক্ষিণের প্রান্তিক স্টেশন শহিদ ক্ষুদিরাম। এই পরিস্থিতিতে যাত্রী পরিষেবা বিঘ্নিতও হতে পারে বলে আশঙ্কা। অনেক নিত্যযাত্রীর আশঙ্কা, মেট্রোর সময়সূচি বদলে যাবে না তো!
যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, এত দিন যে ভাবে মেট্রো চলাচল করেছে, তেমনই চলবে। মেট্রোর সময়সূচি বদলের কোনও সম্ভাবনা আপাতত নেই। ফলে যাত্রী পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার প্রশ্ন উঠছে না। গোটা ব্যবস্থায় শুধু একটাই বদল হচ্ছে— এ বার মেট্রো আর কবি সুভাষ পর্যন্ত যাবে না। দক্ষিণেশ্বর থেকে আগত মেট্রোর শেষ এবং প্রান্তিক স্টেশন হবে শহিদ ক্ষুদিরাম।
কিন্তু শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশনে কবি সুভাষের মতো প্রান্তিক স্টেশনের উপযোগী অনেক ব্যবস্থা নেই। এত দিন কবি সুভাষ স্টেশনে যাত্রীদের ডাউন প্ল্যাটফর্মে নামিয়ে সেই মেট্রোই আবার একটু এগিয়ে লাইন পরিবর্তন করে আপ প্ল্যাটফর্মে এসে দমদম-দক্ষিণেশ্বেরের দিকে রওনা দিত। আপ এবং ডাউনে ট্রেনের লাইন পরিবর্তনের এই ব্যবস্থা শহিদ ক্ষুদিরামে নেই। যেমন দক্ষিণেশ্বরেও জায়গার অভাবে এই ব্যবস্থা করা যায়নি। সেখানে একটি লাইনেই আপ এবং ডাউন ট্রেন যাতায়াত করে। শহিদ ক্ষুদিরামে এই ব্যবস্থাও না-থাকায় প্রশ্ন উঠছে, মেট্রো চলবে কী পদ্ধতিতে? ডাউন প্ল্যাটফর্মে আসা মেট্রো আপ স্টেশনে আসবে কী ভাবে?
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়েছে, দক্ষিণেশ্বর-দমদম থেকে আসা মেট্রো শহিদ ক্ষুদিরামে যাত্রীদের নামিয়ে কবি সুভাষের দিকেই যাবে। তার পর সেখান থেকেই মেট্রো আপ লাইনে উঠে শহিদ ক্ষুদিরামে ফিরে আসবে। ফলে ট্রেন পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।