মালদহে আতঙ্কিত শ্রমিকরা শংসাপত্র নিতে স্কুল, মাদ্রাসায়
বর্তমান | ৩১ জুলাই ২০২৫
সংবাদদাতা, মালদহ: ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে বাংলায় কথা বলায় বাংলাদেশি সন্দেহে স্থানীয় পুলিসের হাতে আটক হচ্ছেন মালদহের অনেক পরিযায়ী শ্রমিক। পরপর এমন ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক তৈরি হয়েছে পরিযায়ী মহলে। ভয়ে নিজের গ্রামে ফিরে অনেকে স্কুল বা মাদ্রাসায় ছুটছেন শংসাপত্র নিতে। অন্য কোনও কারণে নয়, এই শংসাপত্রও নিজেদের ভারতীয় প্রমাণ করার এক খড়কুটো হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাই মালদহের অনেক স্কুল ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের অন্যান্য জরুরি কাজের পাশাপাশি পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করা প্রাক্তনীদের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে অষ্টম বা নবম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার শংসাপত্র। সেগুলি হাতে পেয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন শ্রমিকরা। স্কুলে এসে শংসাপত্র পেয়ে এক শ্রমিক বলেই বসলেন, এবার বাইরের রাজ্যে অন্তত বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দিতে পারবে না। কাগজ আমার আছে।
কালিয়াচক-২ ব্লকের কমলপুর বাবলার দুলালগঞ্জের বাসিন্দা নাবিউল শেখ এদিন দুপুরে ছুটেছিলেন রাজ্য সরকার পোষিত ডিএসকেবি হাই মাদ্রাসায়। প্রধান শিক্ষকের কাছে ১২বছর আগে মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ এই পড়ুয়ার অনুরোধ তাঁকে একটি শংসাপত্র দেওয়ার।
নাবিউল জানান, আর্থিক কারণে খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারিনি। এখন কেরলে কাজ করি। সারা দেশে বাংলাভাষী শ্রমিকদের যেভাবে বাংলাদেশি বলে আটক করা হচ্ছে তাতে আমিও আতঙ্কিত। তাই বাড়ি ফিরে প্রধান শিক্ষকের কাছে এসেছি অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার শংসাপত্র নিতে। তাতে যদি কিছুটা হলেও নিজেকে ভারতীয় প্রমাণে সুবিধা হয়। প্রাক্তন ছাত্রের এই উদ্বেগ উপলব্ধি করে তাঁকে দ্রুত শংসাপত্র দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক মহম্মদ শরিফ আহমেদ।
তিনি বলেন, প্রায় প্রতিদিনই এমন বেশ কয়েকজন আসছেন শংসাপত্র নিতে। উত্তর লক্ষ্মীপুর হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মুকলেসুর রহমানের অভিজ্ঞতাও এক। তিনি বলেন, পরিযায়ী হিসাবে ভিনরাজ্যে কর্মরত এবং এখন আতঙ্কে বাড়ি ফিরে আসা অন্তত ১০জন প্রাক্তন ছাত্রের হাতে অষ্টম বা নবম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার শংসাপত্র তুলে দিয়েছি। প্রতিদিনই এরকমভাবে অনেকে শংসাপত্র নিতে আসছে।
ইংলিশবাজার ব্লকের শোভানগর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিস্বামী দাস বলেন, কী কারণে জানি না। তবে সম্প্রতি অনেক প্রাক্তন পড়ুয়াই আসছেন বিভিন্ন শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার নথি নিতে। স্কুলে থাকা তথ্য পরীক্ষা করে আমরা সেই শংসাপত্র তাঁদেরকে নিয়মিত দিচ্ছি।
এক শ্রমিক শংসাপত্র পেয়ে বলেন, বাইরের রাজ্যে গিয়ে অনেকে হেনস্তা হচ্ছেন। বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। আধার কার্ড দেখালেও স্থানীয় পুলিস মানতে চাইছে না বলে শুনেছি। তাই স্কুল পাশের শংসাপত্র সংগ্রহ করলাম। এবার কেউ পরিচয় জানতে চাইলে কাগজ দেখিয়ে দেব।