আর কত মৃত্যুর পর হবে পাকা রাস্তা! প্রশ্ন তুলছে আদিবাসী গ্রাম পেট্রলগড়
বর্তমান | ৩১ জুলাই ২০২৫
মৃত্যুঞ্জয় কর্মকার, হবিবপুর: আর কত মৃত্যুর পর তৈরি হবে পাকা রাস্তা? প্রশ্ন তুলছেন পেট্রলগড়ের বাসিন্দারা। রাস্তা ভালো থাকলে অ্যাম্বুলেন্সে করে অসুস্থ মাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা শুরু করা যেত। হয়তো বেঁচে যেত প্রাণ। কিন্তু কর্দমাক্ত রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স না চলায় খাটিয়ায় তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াতেই মারা গিয়েছেন বৃদ্ধা রানি সোরেন। মায়ের মৃত্যুর পর এমনই বিষ্ফোরক অভিযোগ মৃতার ছেলের। অবিলম্বে এই রাস্তা পাকা করা না হলে ফের এমন পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা হবিবপুর ব্লকের শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পেট্রলগড়ের বাসিন্দাদের।
এই গ্রামে এলাকায় আট জন গর্ভবতী রয়েছেন। এই কাদা রাস্তা দিয়েই তাদের চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে যেতে হয়। তবে রাস্তার যা দশা, তাতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হওয়া স্বাভাবিক। ইমার্জেন্সি পরিষেবার প্রয়োজন হলে হয়তো ফের খাটিয়ায় তুলে কোনও রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, সেই ভেবেই চিন্তিত গ্রামবাসী। তাঁদের প্রশ্ন, আদিবাসী এলাকা বলেই কি উন্নয়ন থেকে অবহেলিত? ক্ষোভ বাসিন্দাদের।
এইশ গ্রামে ঢোকার প্রধান রাস্তাটি মোট তিন কিমি। তারমধ্যে ২০০ মিটার রেলের। বাকী ২.৮ কিমির মধ্যে শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফে প্রায় ৩০ কিমি করে রাস্তার দুইটি অংশে ঢালাই করা হয়েছে। বাকী বেশিরভাগ অংশ একেবারে বেহাল। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তায় এতটা পরিমাণ কাদা হয়, যে গ্রামে যানবাহন চলাচল পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যায় পড়ে ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে অফিস যাত্রী, চাষিরা। রোগীদের নিয়ে চরম হয়রানির শিকার হন পরিজনরা।
ফিলিপ হেমব্রম নামে গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, আদিবাসী এলাকা বলেই কি প্রশাসন অবহেলা করছে? দিনের পর দিন রাস্তার দাবি জানিয়ে প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু পাইনি। অবিলম্বে রাস্তা তৈরি না করা হলে গ্রামে ভোট বয়কট হবে। মায়ের মৃত্যুর জন্য বেহাল রাস্তাকেই দায়ী করেছেন সমর হাঁসদা বলেন, খাটিয়ায় নিয়ে যেতে গিয়ে রোগীর শরীরে অনেকটা ধকল হয়েছে। রাস্তা ভালো হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সাও তাড়াতাড়ি শুরু করা যেত। অবিলম্বে প্রশাসন রাস্তা নির্মাণ করুক।
রাস্তা খারাপের কারণে রানি সোরেনের মৃত্যুর ঘটনায় পুরোপুরিভাবে স্থানীয় বিজেপির সাংসদ, বিধায়কদেরই দায়ী করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের হবিবপুর ব্লক সভাপতি কেষ্ট মুর্মু বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকায় জেলাপরিষদ, বিধায়ক, সাংসদ সবকটি বিজেপির জনপ্রতিনিধিরা রয়েছেন। তাদের লজ্জা হওয়া দরকার। এই মৃত্যুর জন্য দায়ী একমাত্র এই সমস্ত জনপ্রতিনিধিরা। তারা শুধুমাত্র তৃণমূলের উপর দায় চাপিয়ে নিজের পিঠ বাঁচাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করছেন। ভোট চাইতে ওই গ্রামে যাওয়ার তাদের মুখ নেই। পাল্টা বিজেপি বিধায়ক গোপাল সাহা বলেন, তৃণমূলের রাজত্বে কোনও এলাকাতেই রাস্তা ভালো নেই। এই সরকার বিদায় নিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিষয় প্রসঙ্গে বিডিও মনোজ কাঞ্জিলাল বলেন, ইতিমধ্যেই ওই রাস্তার একটি বিস্তারিত তথ্য জেলায় পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই রাস্তাটি নির্মাণের চেষ্টা হবে। বেহাল রাস্তা। -নিজস্ব চিত্র