পাঠক থাকলেও কর্মী সঙ্কটে পরিষেবা তলানিতে, ক্রমেই ধুঁকছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গ্রন্থাগার
বর্তমান | ৩১ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব সংবাদদাতা, হিলি: সিসি ক্যামেরার মনিটরে চলছে গোটা গ্রন্থাগারের দেখভাল। সেইমতো পাঠকের বইয়ের চাহিদা মেটাতে ছুটে যেতে হচ্ছে অন্য ঘরে। দৃশ্যটা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গ্রন্থাগারের। পাঠক রয়েছেন, বই রয়েছে, কিন্তু নেই পর্যাপ্ত কর্মী। তাই দু-একজন কর্মী নিয়ে পরিষেবা দিতে রীতিমতো সমস্যায় গ্রন্থাগারিক।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক অনুপকুমার মণ্ডলের কথায়, থাকার কথা অন্তত ন’জন কর্মীর। রয়েছেন চারজন। একজন লাইব্রেরি অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকলেও তাঁকে সপ্তাহে তিনদিন অন্য একটি গ্রন্থাগারের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাতে হয়। একজন নাইটগার্ড থাকলেও আগামী বছর জানুয়ারিতে তিনি অবসর নেবেন। এই অবস্থায় যদি দ্রুত কর্মী না মেলে, তবে লাইব্রেরি পরিষেবা চালু রাখা কঠিন হবে।
এই গ্রন্থাগারটির ইতিহাস শতাব্দীপ্রাচীন। ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত হয়েছিল ‘দি বালুরঘাট এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হল অ্যান্ড লাইব্রেরি’ নামে। ১৯৫৫ সালে এটি পশ্চিম দিনাজপুর জেলা গ্রন্থাগার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৯২ সালে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গ্রন্থাগারের পরিচিতি পায়। শতাব্দীপ্রাচীন গ্রন্থাগারটি এক সময় পাঠকদের ভিড়ে গমগম করত। বই সংগ্রহে লম্বা লাইন পড়ত সদস্যদের। যুগ বদলের সঙ্গে গ্রন্থাগার ভাবনার পরিবর্তন এসেছে। আধুনিকতার হাত ধরে পরিবর্তন এসেছে এই গ্রন্থাগারেও। পাঠকদের উৎসাহিত করতে কম্পিউটার এসেছে, ফ্রি ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা হয়েছে। একাধিক বিভাগ খোলা হলেও কর্মী ও পরিকাঠামগত সমস্যার কারণে এখন কম্পিউটার পরিষেবা বন্ধ। কেবলমাত্র ফ্রি ওয়াইফাই চালু রয়েছে।
গ্রন্থাগারে বর্তমানে বিভিন্ন বিষয়ের ৮৫ হাজার বই রয়েছে। গ্রন্থাগারের রেজিস্টার্ড সদস্য সংখ্যা ৪ হাজার ৪৯৮ জন থাকলেও প্রতিদিন গড়ে মাত্র ৩০-৩৫ জন পাঠক আসেন। কর্মীর অভাবে তাঁদেরও পরিষেবা দিতে সমস্যায় পড়ছে গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় একাধিক বিভাগকে এক জায়গায় নিয়ে এসে পরিষেবা সচল রেখেছে কর্তৃপক্ষ। বালুরঘাটের অধ্যাপক সমিতকুমার সাহা বলেন, সমাজ গঠনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমিও এই গ্রন্থাগারে নিয়মিত যাই। পাঠকের কাছে গ্রন্থাগারের সম্পদ তুলে ধরতে এবং সহজে ও দ্রুত পরিষেবা দিতে একজন গ্রন্থাগার কর্মীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক তনুময় সরকার বলেন, জেলা গ্রন্থাগারের পাশাপাশি অন্যান্যগুলিতে কর্মী সমস্যা রয়েছে। ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। অনুমোদন পেলে আশা করছি সমস্যা মিটবে।