• ঝাড়গ্রামে রেলগেটে আটকে গাড়ি কাতর আর্জিতেও খোলেনি, মৃত্যু বধূর
    বর্তমান | ৩১ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ভোররাতে আচমকা শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় বধূকে গাড়িতে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছিল। শহরের কদমকানন এলাকায় লেভেল ক্রসিংয়ে গাড়িটি আটকে যায়। পরিবারের সদস্যদের কাতর আবেদন সত্ত্বেও গেট খোলেনি। পথেই গাড়িতে ছটফট করতে করতে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হল। মৃতার নাম দোলন ঘোষ মণ্ডল(৩৭)। অমানবিক এই ঘটনায় রেলের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠছে। যদিও খড়্গপুর ডিভিশনের সিনিয়র ডিসিএম নিশান্ত কুমার বলেন, নিয়ম অনুযায়ী গেটকিপার লেভেল ক্রসিং খুলতে পারেন না। স্টেশন মাস্টারকে জানালে বা খড়্গপুর কন্ট্রোল রুম খবর পেলে ট্রেন থামাতে পারে।

    ঝাড়গ্রামের বাছুরডোবা এলাকায় বাসিন্দা দোলনের শশুরবাড়ি বাঁকুড়ায়। কিডনির রোগে ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে গত এক বছর ধরে বাপেরবাড়িতে থাকছিলেন। ডায়ালিসিসের জন্য তাঁকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ম করে আনা হতো। কিছুদিন আগে বাড়িতে শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় অন্য রাস্তা দিয়ে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজে আনা হয়েছিল। সময়মতো অক্সিজেন দেওয়ায় বেঁচে যান। বুধবার ভোর সাড়ে ৩টের সময় আবার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। দ্রুত হাসপাতালে আনার জন্য পরিবারের সদস্যরা গাড়ি নিয়ে শহরের কদমকানন এলাকার রাস্তা ধরে আসছিলেন। 

    লেভেল ক্রসিং বন্ধ থাকায় প্রায় ২০মিনিট গাড়িটি আটকে থাকে। পরিবারের লোকজন লেভেল ক্রসিং খোলার জন্য গেটকিপারকে বারবার আবেদন জানান। সেই আর্তিতে কর্ণপাত করেননি তিনি। গাড়ির মধ্যেই দোলন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। গেট খোলার পর মেডিক্যাল কলেজে আনার পর চিকিৎসক জানান, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। 

    ঝাড়গ্রাম শহরের বুক চিরে এই রেললাইন চলে গিয়েছে। ঝাড়গ্রাম স্টেশনের একদিকে খড়্গপুর অপর দিকে টাটানগর ও রৌরকেল্লা জংশন। রেলপথে প্রতিদিন প্রচুর যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালগাড়ি চলাচল করে। কদমকানন লেভেল ক্রসিং বন্ধ হলেই দীর্ঘক্ষণ যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। শহর ও শহর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে পড়ে নিত্যদিন যানজটের সমস্যায় পড়েন। লেভেল ক্রসিংয়ে আন্ডারপাশ বা ওভারব্রিজের দাবি উঠেছে। তৃণমূল সাংসদ কালীপদ সরেন রেলের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। তারপরও কোনও কাজ হয়নি। লেভেল ক্রসিংয়ে আটকে পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় শহরজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। 

    মৃতার ভাই রাজকুমার মণ্ডল বলেন, দিদি একবছর ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিল। এনআরএস হাসপাতালে তিনমাস ভর্তি ছিল। ঝাড়গ্রাম মেডিক্যালে ডায়ালিসিসের জন্য নিয়ে যেতে হতো। 

    ভোররাতে কদমকানন হয়ে তাড়াতাড়ি গাড়িতে দিদিকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছব ভেবেছিলাম। দিদি গাড়িতে ছটফট করছিল। রেলকর্মীকে গেট খোলার জন্য বারবার আবেদনও করি। অক্সিজেন না পেয়ে চোখের সামনে ছটফট করতে করতে দিদি মারা গেল। দুই ভাগ্নি রয়েছে, ওদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে গেল। অন্য রাস্তায় গেলে হয়তো দিদি বেঁচে যেত। 
  • Link to this news (বর্তমান)