• চাপড়া-১ পঞ্চায়েতে অনিয়মের অভিযোগ, কাজ না করেই বিল পেমেন্ট বহু প্রকল্পের
    বর্তমান | ৩১ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: সরকারি বহু প্রকল্পের বিল পেমেন্ট হয়েছে। অথচ সেইসব কাজ নাকি বাস্তবে হয়নি। পুরনো কাজকে নতুন হিসেবে দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিল পেমেন্ট করে দেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সরকারি কাজ নিয়ে এমনই বেনিয়মের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে চাপড়া-১ পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। ওই পঞ্চায়েতের শাসক ও বিরোধী উভয় শিবিরেরই সিংহভাগ সদস্য এই অভিযোগ এনেছেন। যাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক শোরগোল পড়েছে। একটা কিংবা দুটো নয়, সরকারি বহু প্রকল্পেই এই ধরনের অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগ। টাকার অঙ্কে সেই অনিয়মের পরিমাণ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন পঞ্চায়েতের সদস্যরা। অধিকাংশ এলাকাতেই প্রকল্পের কাজ না হলেও বিল পেমেন্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেন সদস্যরা। যদিও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

    চাপড়া-১ পঞ্চায়েতের প্রধান দিলওয়ারা বিবি শেখ বলেন, এটা একটা ষড়যন্ত্র।‌ এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে।‌ গোটা বিষয়টি পঞ্চায়েত ও ব্লক প্রশাসন জানে। ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে আমিও তদন্ত করতে চাই। সব কাজ ঠিকঠাক ভাবেই হয়েছে। কোথাও অনিয়ম হয়নি। 

    চাপড়া-১ পঞ্চায়েতের কংগ্রেস দলের বিরোধী দলনেতা নায়েব মণ্ডল বলেন, আমার বুথে তিন লক্ষ টাকার রাস্তা এবং দু’ লক্ষ টাকার টিউবওয়েল, মোট ৫ লক্ষ টাকার প্রকল্পের কাজ ঠিকাদার করেনি, অথচ তার বিল পেমেন্ট করা হয়ে গিয়েছে। তার রিসিভড কপিও আমার কাছে আছে।‌ এছাড়াও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বুথে এইভাবেই কাজ না করে টাকা তোলা হয়েছে। কম বেশি প্রায় এক কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে। আমরা বিষয়টা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কৃষ্ণনগর সদরের মহকুমা শাসক শারদ্বতী চৌধুরী বলেন, আমরা অভিযোগ খতিয়ে দেখব। যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা চাপড়া বিধানসভার বিধায়ক রুকবানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমরা জানা নেই। যদিও কোথাও অনিয়ম হয়ে থাকে প্রশাসন খতিয়ে দেখুক।

    চাপড়া ব্লকের চাপড়া-১ পঞ্চায়েতটি বর্তমানে তৃণমূলের দখলে রয়েছে। যদিও এই এলাকায় বিরোধী শিবিরও শক্তিশালী। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই পঞ্চায়েতের ২১টি আসনের মধ্যে ৯টি আসনে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল। ৩টি আসনে সিপিএম, ২টি আসনে বিজেপি এবং ৬টি আসনে কংগ্রেস জয়ী হয়।‌ পঞ্চায়েতটি ত্রিশঙ্কু হয়ে পড়ায় বোর্ড গঠনের সমস্যা হচ্ছিল। সেই সময়ে একজন সিপিএম সদস্য এবং একজন বিজেপি সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। যার ফলে পঞ্চায়েতের তৃণমূলের সদস্য সংখ্যা হয়ে দাঁড়ায় ১১। সিপিএম থেকে যোগ দেওয়া সদস্য দিলওয়ারা বিবিকে পঞ্চায়েত প্রধান করে বোর্ড তৈরি হয়। কিন্তু প্রধান হওয়ার পর থেকেই অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে দিলওয়ারার দূরত্ব বাড়তে থাকে। এমনকী শাসকদলের সদস্যদেরও তিনি গুরুত্ব দেন না বলে অভিযোগ। 

    সম্প্রতি ওই পঞ্চায়েতের আইএনটিটিইউসির সভাপতি হায়দার মল্লিক চাপড়া-১ পঞ্চায়েতের কাজ নিয়ে আরটিআই করেন। যদিও সেই আরটিআইয়ের জবাব দিতে পঞ্চায়েত অনেকটাই দেরি করে। হায়দার বলেন, কাজ নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় আমি আরটিআই করি। কারণ, দেখা যাচ্ছিল অনেক জায়গায় কাজ না হলেও তার বিল পেমেন্ট হয়ে যাচ্ছিল। এই অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলাম। পাশাপাশি পঞ্চায়েতের ১৩ জন সদস্যও এই নিয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানান। 
  • Link to this news (বর্তমান)