তিলপাড়া ব্যারাজের ছাড়া জলে ভাঙল ময়ূরাক্ষীর লিঙ্ক বাঁধ। একদিনের বন্যাতেই ভরতপুর-১ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার আমনের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। তবে বুধবার সকাল থেকেই জল নামতে শুরু করায় স্বস্তি প্রশাসনের। ভাঙা বাঁধের মেরামতিও শুরু করেছে সেচদপ্তর। অন্যদিকে, খড়গ্রাম ব্লক এলাকার পদমকান্দি পঞ্চায়েতের দ্বারকার ভাঙা বাঁধ দিয়ে গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকালে তিলপাড়া ব্যারাজ থেকে প্রায় ৪৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছিল। এরপর সন্ধ্যার দিকে আরও ১৬ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। বেলা ১২টার পর থেকে ময়ূরাক্ষী নদী দিয়ে ব্যারাজের প্রথম ছাড়া জল ওই ব্লক এলাকায় ঢুকতে শুরু করে। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন নদী সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দারা। সন্ধ্যায় আরও জল ছাড়া হলে ময়ূরাক্ষীতে চরম জলস্ফীতি দেখা দেয়। ওইসময় কান্দি-সালার রাজ্য সড়কের আঙারপুর গ্রামের কাছে রাস্তার উপর সামান্য জল উঠে যায়। যদিও ভোরের দিকে জল নেমে যায়। তবে গভীর রাতে ভরতপুর-১ ব্লকের জাখিনা গ্রামের কাছে ময়ূরাক্ষীর লিঙ্ক বাঁধ ভেঙে যায়।
বাঁধ ভেঙে কোল্লা, জাখিনা, চাঁদপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমি জলে ডুবে যায়। এমনকী, কোল্লা ও চাঁদপুর গ্রামের ভিতরেও জল ঢোকে। কোল্লা গ্রামের বাসিন্দা ইউনুস শেখ বলেন, গভীর রাতে জল ঢোকার শব্দ পেয়ে চরম আতঙ্কিত হই। বন্যার জল গ্রামেও ঢুকেছে। বাড়ি-ঘরের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে আমনের জমির ফসল নষ্ট হতে বসেছে। এদিকে, মঙ্গলবার সকালেই বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার জন্য প্রশাসনের তরফে মাইকিং করা হয়। বলা হয়, ময়ূরাক্ষীর দক্ষিণ দিকের মাঠে চাষের জন্য কেউ গেলেও দুপুরের আগে যেন বাড়ি ফিরে আসেন। প্রশাসনের সতর্কতা সত্ত্বেও ওই এলাকায় আটকা পড়ে যান বড়ঞা ব্লকের পাঁচথুপি গ্রামের পশুপালক লালা ঘোষ। তিনি একটি উঁচু জায়গায় গাছের উপর আশ্রয় নিয়েছিলেন। গভীর রাতে স্পিডবোট নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করেন। ভরতপুর-১ বিডিও দাওয়া শেরপা বলেন, সেচদপ্তর লিঙ্ক বাঁধের মেরামতি শুরু করেছে। তবে বন্যার জল কমতে শুরু করেছে। তেমন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। বন্যার জলে আটকে পড়া পশুপালককে উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে, ময়ূরাক্ষীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে কুয়ে নদীর জলও দাঁড়িয়ে যায়। যার ফলে বড়ঞা ব্লকের জাওভরি, ভড়োয়া, কয়থা গ্রামের কৃষিজমিতে জল ঢুকতে শুরু করে। আবার ভরতপুর-১ ব্লকের সুখদানপুর গ্রামে যাওয়ার রাস্তাও জলে ডুবে গিয়েছে। ভরতপুর-১ ব্লকের শ্যামপুর, চাঁচোয়া, গড্ডা, সিংহারি, বালিচোনা গ্রামগুলির মাঠেও কুয়ে নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছে। খড়গ্রাম ব্লকের পদমকান্দি গ্রামের কাছে দ্বারকা নদীর বাঁধের একটি অংশ কাটা ছিল। মঙ্গলবার রাতে ওই অংশ দিয়ে বিভিন্ন গ্রামের মাঠে জল ঢুকতে শুরু করেছে। স্থানীয় পদমকান্দি পঞ্চায়েত প্রধান সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, বাঁধের কাটা অংশ দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে কাদিপুর, পদমকান্দি, সর্বমঙ্গলাপুর গ্রামগুলির মাঠ জলে ভরে গিয়েছে। আমন ধানের আশা শেষ হয়ে গেল।