রেজিনগরে তৃণমূল নেতা খুনে নদীয়া থেকে ধৃত ৩ অভিযুক্ত
বর্তমান | ৩১ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ঘটনার চারদিন পর রেজিনগরে তৃণমূলের বুথ সভাপতি খুনে অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। নদীয়া জেলা থেকে তাদের ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই রাতে মুর্শিদাবাদের রেজিনগর থানার আন্দুলবেড়িয়া উত্তর কলোনির তৃণমূলের বুথ সভাপতি প্রতীত পালকে একদল দুষ্কৃতী বাঁশ, লাঠি ও শাবল দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এই ঘটনায় গুরুতর জখম ওই তৃণমূল নেতাকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই চারদিন পর শুক্রবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় মৃতের পরিবার রেজিনগর থানায় ছ’জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। এই ঘটনার তদন্তে নেমে আজ অর্থাৎ বুধবার ভোরে নদীয়া জেলার নাকাশিপাড়া থেকে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিস।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতরা হল অমিত সরকার, বিজন সরকার ও পাপ্পু সরকার। বিজন এবং পাপ্পু দুই ভাই। ধৃতদের সকলের বাড়ি রেজিনগর থানার আন্দুলবেড়িয়া উত্তর কলোনি এলাকায়। ধৃতদের বুধবার মুর্শিদাবাদ জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক সাতদিনের পুলিসি হেফাজত মঞ্জুর করেন।
বেলডাঙার এসডিপিও ডক্টর উত্তম গড়াই বলেন, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নদীয়ার নাকাশিপাড়াতে অভিযান চালিয়ে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে পুলিসি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের একটা পুরনো বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে আমাদের প্রাথমিক অনুমান। ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য মিলবে।
খুনের পর পরিবারের প্রাথমিক দাবি ছিল, অভিযুক্তরা সকলেই বিজেপি কর্মী। কিন্তু পরে এই ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের প্রমাণ মিলছে বলেই সরব হয় বিজেপি। প্রতীতবাবু মৃত্যুর আগে ছ’জনকে চিহ্নিত করেছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজনকে পুলিস পাকড়াও করেছে।
জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় স্থানীয় বুথ সভাপতি প্রতীতবাবুর সঙ্গে বিজেপির নেতাকর্মীদের ব্যাপক গন্ডগোল হয়। সেই সময়ে প্রতীতবাবুর বাবাকে আক্রমণ করা হয়। জখম হয়ে তিনিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রতীতবাবু এবং তাঁর পার্শ্ববর্তী কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়। থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। এই ঘটনায় কুড়িজনের বেশি অভিযুক্তর নামে মামলা চলছে। তারাই বেশ কিছুদিন ধরে প্রতীতবাবুকে হুমকি দিচ্ছিল মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। মনে করা হচ্ছে, সেই মামলা থেকেই নিষ্কৃতী পেতেই অভিযুক্তরা দল বদলে তৃণমূলের পতাকা হাতে নেয়। তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি তাদের হাতে পতাকা তুলে দেয় বলেই দাবি বিজেপির। খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের তৃণমূল যোগ মেলায় অস্বস্তিতে শাসকদল।
বহরমপুরের বিজেপির সাধারণ সম্পাদক লাল্টু দাস বলেন, এই ঘটনায় প্রথমে বিজেপির উপরে দোষ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনই তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। প্রাক্তন ব্লক সভাপতির সঙ্গে তাদের ছবি রয়েছে। কীভাবে তৃণমূল দায় এড়াতে পারে? এই দলটি গোষ্ঠী কোন্দলে জর্জরিত। নিজেরাই খুন করছে আর পুলিস আসামীদের ধরতে বেগ পাচ্ছে। কারণ ধরলেই তো প্রমাণ হয়ে যাবে তারা কারা। এদিন যে তিনজন গ্রেপ্তার হয়েছে, তারা সকলেই নব্য তৃণমূল।
রেজিনগরের তৃণমূল বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরী বলেন, খুনিদের কোনও দল হয় না। আমরা কেউ কোনও খুনিকে সমর্থন করি না। যারা দোষ করেছে, পুলিস অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।