ঝাড়গ্রামে স্কুলে ঢুকে একাধিক শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চ ও চেয়ার-টেবিল ভাঙল হাতির পাল
বর্তমান | ৩১ জুলাই ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রামে হাতির তাণ্ডব আর কিছুতেই থামছে না। গ্ৰামে গ্ৰামে ঢুকে বাড়িঘর ভাঙচুর করছে। বাদ যাচ্ছে না স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও। মঙ্গলবার রাতেও ঝাড়গ্রামের বারডাঙ্গা শিবাজি হাইস্কুলে ১৪টি হাতির তাণ্ডব ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। স্কুলের একাধিক শ্রেণিকক্ষের দরজা জানলা বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল ভেঙে ফেলে। তাতে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। স্কুল লাগায়ো অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও ভাঙচুর হয়েছে। হাতির তাণ্ডবে স্কুলের পঠন পাঠন বন্ধের মুখে।
ঝাড়গ্রামজুড়ে বর্তমানে জ্বলন্ত সমস্যা হাতির হানা। রাত হলেই তারা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গ্ৰামে ঢুকছে। মাটির বাড়ির দেয়াল ভেঙে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছে। জানলা ভেঙে শুঁড় ঢুকিয়ে খাবারের সন্ধান করছে। গ্ৰামবাসীদের বাড়িঘর, অঙ্গনওয়াড়ির রান্নাঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। স্কুলের মিড ডে মিলের চালের বস্তা রাখা গোডাউনেও হাতির পাল নিয়মিত ভাঙচুর চালাচ্ছে। গ্ৰামের পথে গুমটির দোকান থাকলে উপড়ে ফেলে দিচ্ছে। দোকানের চালডাল, আনাজপাতি শুধু নয়, চিপসের প্যাকেট, কাঁচের বয়ামে রাখা লজেন্স খেয়ে চলে যাচ্ছে। গোয়ালঘরে ঢুকে গোরুর পেটে দাঁত ঢুকিয়ে দিচ্ছে। বাছুর সামনে পেলে শুঁড়ে তুলে আছড়ে মারছে। বনবিভাগের কর্মী, স্থানীয় থানার পুলিস হাতি তাড়াতে গেলে তাঁদের গাড়ির উপর হামলা চালাচ্ছে। হাতির ভয়ে রাতের পর রাত গ্ৰামের মানুষ এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
হাতির পালের এরকম নানা দৌরাত্ম্যে মানুষ অতিষ্ঠ। কিন্তু বারডাঙ্গার স্কুলের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে যেভাবে দরজা, জানলা, বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল এবার ভাঙল, তা দেখে তাজ্জব গ্রামবাসী থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকারা। এদিন পড়ুয়ারা স্কুলে এলেও পঠনপাঠন সেভাবে হয়নি। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাদের। শিক্ষকরা কিভাবে স্কুল চালাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। স্কুলটির তিনদিক জঙ্গলে ঘেরা। হাতির পাল ফের আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্কুলের সহ শিক্ষক গোকুল খামরি বলেন, ‘রাত এগারোটার সময় স্কুলে হাতির পাল ঢোকার খবর পাই। মিড ডে মিলের চালের বস্তা রাখা গোডাউনে ভাঙচুর করবে ভেবেছিলাম। স্কুলে এসে দেখি, গোডাউন তো ভেঙেছেই। সেই সঙ্গে স্কুলের দু’টি ভবনের পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম,অষ্টম শ্রেণিকক্ষের কমবেশি বেঞ্চ, চেয়ার-টেবিল ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। স্কুলের ন’টি দরজা, চারটে জানলার কোনও অস্তিত্ব রাখেনি হাতির দলটি। পাশে থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও ভাঙচুর চালিয়েছে।’ স্কুলে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৮৬ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। ছ’জন শিক্ষক রয়েছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌতম ভক্তা বলেন, ‘বন দফতরের কর্মীরা সকালে স্কুলে এসেছিলেন। ক্ষতিপূরণের ফর্ম দিয়ে গিয়েছেন। শিক্ষাদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা স্কুলের পক্ষে সামলানো কঠিন। স্কুলের পঠনপাঠন স্বাভাবিক করতে আমাদের সহযোগিতার প্রয়োজন।’ খড়গপুর বন বিভাগের ডিএফও মণীষ যাদব বলেন, ‘খবর পেয়েই এদিন সকালে বন বিভাগের কর্মীরা স্কুলে গিয়েছিলেন। বারডাঙ্গা হাতি উপদ্রত এলাকা। সম্ভবত আট থেকে ন’ বছরের হাতিরা এই ভাঙচুর চালিয়েছে বলে অনুমান করছি। স্থানীয় একটি হাটকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’ -নিজস্ব চিত্র