• ভেঙে পড়েছে জল প্রকল্প, প্রাচীন কুয়োই ভরসা রানিগঞ্জবাসীর, ডায়ারিয়ার আশঙ্কা
    বর্তমান | ৩১ জুলাই ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানিগঞ্জ: রাস্তার পাশের কুয়ো থেকে কোনওরকমে জল ভরা বালতি টেনে তুলছেন বৃদ্ধা তুলসী তুরি। শরীর অশক্ত, তবু কুয়ো থেকে জল তুলে, কোমরে কলসি ও মাথায় বালতি চাপিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন। তিনি বলেন, ‘জল ছাড়া চলবে কীভাবে? তাই বাধ্য‌ হ঩য়েই বুড়ো বয়সে এই ভোগান্তি।’ শুধু তুলসীদেবীই নন, কুয়ো থেকে জল তুলছিলেন কল্যাণী মাহাত, পারুত মাহাতরাও। জল নিয়ে ঘরে ফিরতে গিয়ে ভরা বর্ষাতেও তাঁরা ঘামছেন। তাঁরা বলেন, ‘কুয়ো থেকে জল তোলার অভ্যাস চলে গিয়েছে তো। তাই এই গলদঘর্ম অবস্থা।’ এই ছবি ধরা পড়েছে রানিগঞ্জের রানিসায়েরের কর্মকার পাড়ায়। সকলেরই দোতলা, তিনতলা পাকা বাড়ি রয়েছে। বাড়িতে এসি আছে। নেই শুধু জল।

    সকলের এই ভোগান্তির কারণ সম্প্রতি দামোদরে জল প্রকল্পের ব্রিজ ভেঙে পড়া। হীরাপুর থানার কালাঝরিয়ায় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তরের জলপ্রকল্পের ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে। যারজেরে জলপ্রকল্প সম্পূর্ণ বিকল। ভরা বর্ষায় উত্তাল দামোদরে সংস্কারের কাজও সম্ভব নয়। এহেন অবস্থায় এই জলপ্রকল্প থেকে সুবিধা পাওয়া সাধারণ মানুষ পড়েছেন চরম সমস্যায়। প্রশাসন গালভরা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা যে বাস্তবে কতটা অপ্রতুল, তার পরিচয় পাওয়া গেল এলাকায় গিয়েই। আসানসোল পুরসভার ৩৩নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত রানিসায়ের কর্মকারপাড়ার বাসিন্দারা এতদিন ধরে এই প্রকল্পের জলই পেয়ে এসেছেন। জানা গিয়েছে, ওই প্রকল্প থেকে প্রতিদিন আড়াই ঘণ্টা করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল দেওয়া হতো। এখানে প্রতিটি বাড়িতে জলের সংযোগ না দেওয়া হলেও রাস্তায় ট্যাপ ছিল। তা থেকেই বেশিরভাগ বাসিন্দা নিজেদের বাড়ি জলের সংযোগ নিয়ে নিয়েছেন। বাড়িতে বসে পরিস্রুত জল পাওয়া  মানুষজনকেই এখন পাড়ার কুয়োতলায় ছুটতে হচ্ছে। যাঁদের কুয়ো রয়েছে, তাঁদের কষ্ট তাও কিছুটা কম। যাঁদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে কুয়ো রয়েছে, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ।

    জানা গিয়েছে, রাতারাতি ৪৫-৫০ বছরের পুরনো কুয়োগুলির কদর বেড়ে গিয়েছে। যাঁদের আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা বাইরে থেকে জল কিনে খাচ্ছেন। গরিব মানুষ এই কুয়োর জলই পানীয় হিসেবে ব্য‌বহার করছে। রানিসায়ের কোড়াপাড়াতেও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। সকারি কোড়া, রণেন কোড়ারা বলেন, বড় লোকরা জল কিনে খাবে। আমরা কি আর জল কিনে খেতে পারব? তাই বাধ্য হয়ে কুয়োর জল খাচ্ছি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শেখ মহম্মদ ইউনুস বলেন, বর্ষাকালে পুরনো কুয়োর জল খেতে শুরু করলে, তা সকলের স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। ডায়ারিয়া আউটব্রেক হয়ে যেতে পারে। স্বাস্থ্যদপ্তরের টিমকে এলাকায় পাঠাব। রানিসায়েরের অদূরে কদমডাঙাতেও জলের হাহাকার শুরু হয়েছে। মঙ্গল মাঝি, ভিকি যাদবদের দাবি, বলা হয়েছিল বিকল্প জলের ব্যবস্থা করা হয়। শুক্রবার কিছুক্ষণের জন্য সেই জল দিয়েছিল। তারপর আর দেয়নি। এত অল্প জলে কোনও কাজ হবে না। কাঁটাগোড়িয়া থেকে ইন্দ্রভূমি কলোনি, সর্বত্র একই ছবি ধরা পড়েছে। সিপিএম কাউন্সিলার নারাণ বাউরি বলেন, মানুষ খুবই দুর্ভোগে পড়েছে।

    আসানসোল পুরসভার মেয়র পরিষদ সদস্য সুব্রত অধিকারি বলেন, ডামালিয়া থেকে বিকল্প জল এনে এলাকায় সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তা পর্যাপ্ত না হলে ট্যাঙ্কারের ব্যবস্থা করা হবে। কুয়ো সংস্কারের প্রস্তাব এলে তাও খতিয়ে দেখা হবে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)