স্বাধীনতা সংগ্রামীর পুত্র! শিক্ষকের চোখে কেমন ছিলেন নবকুমার ওরফে স্বামী অসীমানন্দ
প্রতিদিন | ৩১ জুলাই ২০২৫
টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: হুগলির মেধাবী পড়ুয়া। পদার্থবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা। হুগলি, বর্ধমান থেকে বাঁকুড়ায় ছড়িয়ে স্বামী অসীমানন্দ ওরফে নবকুমার সরকারের নাম। প্রচলিত শিক্ষার বাইরে স্পষ্ট চিন্তাভাবনার অধিকারী। খ্রিস্টান মিশনারিদের বিরুদ্ধে মনোভাব, আদিবাসী সমাজকে হিন্দু ধর্মের অংশ হিসেবে দেখা, মুসলিম বিরোধী চিন্তাভাবনাই নবকুমারকে হিন্দু সন্ত্রাসবাদের মুখ হিসাবে দাগিয়ে দেয়। আজ, মলেগাঁও বিস্ফোরণে অভিযুক্তদের বেসকুর খালাস পাওয়ার পর ফের সংবাদের শিরনামে বাংলার স্বামী অসীমানন্দ।
গাঁয়ের মেঠো পথেই শৈশব কেটেছে স্বাধীনতা সংগ্রামী বিভূতিভূষণ সরকারের ছেলের। মেধাবী নবকুমার উচ্চশিক্ষার জন্য যান বাঁকুড়ায়। ভর্তি হন বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে। তার আগে থেকেই আরএসএসের সংস্পর্শে এসে তীব্র হিন্দু ভাবধারা সুপ্ত অবস্থায় ছিল। বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে থাকাকালীন তিনি খ্রিস্টান মিশনারিদের বিরুদ্ধ মনোভাব পোষণ করতে থাকেন। ঘটনাচক্রে জঙ্গলমহল এলাকায় সংঘের প্রচারের দ্বায়িত্ব পান তিনি।
তখনই আদিবাসী সমাজকে তিনি হিন্দু ধর্মের অংশ হিসাবে দেখতে শুরু করেন। মতানৈক্য হয় আরএসএসের সঙ্গে। এক সময়ে বিবাদ চরমে ওঠে। যোগ দেন এক ‘অভিনব ভারত’ নামে অন্য একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনে। স্বামী অসীমানন্দের ইউএসপি ছিল বাগ্ ক্ষমতা। কখনও নবকুমার, কখনওবা যতীন চট্টোপাধ্যায়, কোনও সময় নাম ওঙ্কারনাথ বসনধারী স্বামী অসীমানন্দ প্রথমদিকে পরিচিত ছিলেন হিন্দু কট্টরপন্থী নেতা হিসাবে। কিন্তু ছেলেবেলা বা উচ্চশিক্ষার শুরুতে কেমন ছিলেন তখনকার নবকুমার?
নবকুমারের এক প্রাক্তন শিক্ষক জানাচ্ছেন, “নবকুমার খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। কিন্তু প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে তাঁর চিন্তাভাবনা ছিল স্পষ্ট। ধর্ম, জাতি ও সাংস্কৃতিক প্রশ্নে ও গভীরভাবে ভাবনাচিন্তা করত।” নবকুমারের মধ্যে পরিবর্তন ধীরে ধীরে লক্ষ করা যাচ্ছিল বলেই জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “আদিবাসী সমাজকে হিন্দু ধর্মের অংশ হিসেবে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি এখানকার জঙ্গলমহলের অভিজ্ঞতা থেকেই। বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে থাকাকালীন শুরু হওয়া সংঘর্ষ থেকেই তার মধ্যে খ্রিস্টান মিশনারিদের বিরুদ্ধে মনোভাব জন্ম নেয়।”
১৯৯০ সালের শেষের দিক থেকে তিনি পাকাপাকিভাবে গুজরাটের ডাং জেলায় বসবাস শুরু করেন। যেখানে ‘শবরী ধাম’ নামে একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন স্থাপন করেন। এই সময়কালে গুজরাটের গান্ধীনগরের অক্ষরধাম মন্দিরে জঙ্গি হামলায় প্রাণ যায় ৩০ পুণ্যার্থীর। দেশবাসীর বদলা নেওয়ার তাগিদে আরও হিংসাত্মক হয়ে ওঠেন নবকুমার। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এখান থেকেই এই হিন্দু কট্টরপন্থী নেতার জীবন এবং চিন্তাধারা এক নতুন মোড় নেয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই ঘটনার সাত বছর পর থেকে অর্থাৎ ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে দেশের মাটিতে অন্তত চারটি ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা।
সমঝোতা এক্সপ্রেস বিস্ফোরণ (২০০৭), আজমের বিস্ফোরণ (২০০৭), মক্কা মসজিদ বিস্ফোরণ (২০০৭) এবং মালেগাঁও বিস্ফোরণ (২০০৮)। প্রত্যেকটিতে নাম জড়ায় গ্রামবাংলা ছেলে। তবে সবকটি থেকেই বেকসুর খালসা পান তিনি। তবে ক্রমেই হিন্দু সন্ত্রাসবাদের মুখ হয়ে ওঠেন হুগলির নবকুমার।