• ‘বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস’ বলেছিলেন মাও, ঝাড়গ্রামের শোভা কিন্তু বন্দুক ‘ছুঁয়েও দেখেননি’!
    প্রতিদিন | ৩১ জুলাই ২০২৫
  • সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: পরনে গোলাপি শাড়ি, বাম হাতে কালো ব্যান্ডের ঘড়ি। দু’হাতে চুরি, গলায় সোনালি চেন ? এই বেশেই বুধবার ঝাড়গ্রাম আদালত চত্বরে বেশ ফুরফুরে হাসিখুশি মেজাজে পাওয়া গেল চন্দনা সিং ওরফে শোভা মুন্ডাকে। খুব ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে বাসে চড়ে বেশ কয়েকবার ঝাড়গ্রাম বাজারে এসেছিলেন শোভা। কিন্তু কুড়ি বছর আগের সেই সব দিনগুলি আজ অনেকটাই ধূসর। ঝাড়গ্রাম মানেই তার কাছে স্মৃতি হিসেবে উঠে আসে ধরা পড়ার পর আর পাঁচজন আসামির মতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে চড়ে আদালতে আসা। এবারের আসাটা একটু অন্যরকম।

    জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন আজ প্রায় সাতদিন হল। বুধবার দাদা তারক সিং, বউদি ছবির সঙ্গে বেলপাহাড়ি থেকে বাসে চড়ে আদালতে এসেছিলেন শোভা ওরফে চন্দনা। বেলপাহাড়ির একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন তিনি। ‘মাওবাদী নেত্রী’ কথাটা শুনতে তাঁর আর ভালো লাগে না। শোভার কথায়, “আমি কোনওদিন মাওবাদীর প্রশিক্ষণ নিইনি। বন্দুক ছুঁয়েও দেখিনি। অত্যাচার দেখে বাড়ি ছেড়ে ছিলাম। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতাম। আর এই করতে গিয়ে সতেরো বছর বয়সে ধরা পড়লাম। পনেরো বছর জেলে কাটালাম।” জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি এবং সাঁকরাইল থানা এলাকায় শোভার মোট ছ’টি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা রয়েছে। এর মধ্যে চারটি বেলপাহাড়ি থানা এলাকার। তার মধ্যে একটি ২০০৪ সালের বেলপাহাড়ির থানা এলাকার একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় হাজিরা ছিল এদিন। আগামী ১০ নভেম্বর পরবর্তী হাজিরার দিন রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

    শোভা মুন্ডার আইনজীবী কৌশিক সিনহা বলেন, “আগে মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছে বলে মামলা দিয়েছিল। তবে আদপেই এরা কোনও নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। তবে আগেকার দিনের মানুষের উপর যে অত্যাচার, অবিচার হতো সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে এরা প্রতিবাদ করত। সেই প্রতিবাদ করার জন্যই এদেরকে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। দীর্ঘদিন জেল খাটার পর কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু যে মামলাগুলি রয়েছে, তার জন্য আদালতে আসতে হবে। এদিন বুধবার বেলপাহাড়ি থানার একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা ছিল। সেই মামলার হাজিরা দিতে এসেছিলেন। বাকি আরও কেস রয়েছে বিভিন্ন তারিখে আসবেন। তবে শোভাকে সেই সময়কালে প্রতিবাদী মহিলা হওয়ার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল।”

    বুধবার ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির হয়ে শোভা বলেন, “চাকরির বিষয়ে এখনও ভাবিনি। তবে ভবিষ্যতে রাজ্য সরকারের কোনও চাকরি পেলে ভালো লাগবে।” সংসার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে হাসিমুখে জানান, “সংসার তো করতে চাই, কিন্তু স্বামী রাজেশ তো এখনও বহরমপুর জেলে। ওকে মুক্ত করার জন্য উকিলবাবুর কাছে আবেদন জানিয়েছি।” দীর্ঘ দেড় দশক জেলবন্দি থাকার পর শোভা শান্তিপূর্ণ জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখছেন।
  • Link to this news (প্রতিদিন)