• ‘চর্যাপদের ভাষা, মূল্য দিতেই হবে’, বাংলা ও বাঙালি ‘হেনস্তা’য় গর্জে উঠলেন অমর্ত্য সেন
    প্রতিদিন | ০১ আগস্ট ২০২৫
  • দেব গোস্বামী, বোলপুর: বাংলা ও বাঙালির উপর সম্প্রতি ভিনরাজ্যে নির্যাতনের অভিযোগ শুনে গর্জে উঠলেন নোবেলজয়ী বঙ্গসন্তান ড. অমর্ত্য সেন। নতুন করে শতাব্দীপ্রাচীন বাংলা ভাষার ইতিহাস ও গুরুত্বের কথা বলে তাঁর তীব্র প্রতিক্রিয়া, ”বাঙালিদের উপর যদি অত্যাচার হয়, অবহেলা হয়, যথেষ্ট আপত্তির কারণ থাকবে। অবহেলিত হলে তা নিশ্চয়ই বন্ধ করতে হবে। যাঁরা ভারতীয়, তাঁদের পুরো ভারতবর্ষের উপর অধিকার আছে৷ শুধু একটা অঞ্চলের উপর নয়।” বললেন, ”একটা ভাষার যে মূল্য পাওয়া উচিত, সে মূল্য পায় না। তার উপর বড় রকম অবহেলা হলে, সেটা নিশ্চয়ই বন্ধ করতে হবে।”

    বৃহস্পতিবারই বিদেশ থেকে শান্তিনিকেতনে নিজের বাড়ি ‘প্রতীচী’তে ফিরেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেন। সঙ্গে কন্যা নন্দনা দেবসেন। ‘ভারতরত্ন’ অর্থনীতিবিদকে ফুলের স্তবক দিয়ে স্বাগত জানান বোলপুর মহকুমাশাসক অয়ন নাথ ও বোলপুরের এসডিপিও রিকি আগরওয়াল-সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। ১৯ আগস্ট পর্যন্ত তিনি শান্তিনিকেতনেই থাকবেন বলেই জানা গিয়েছে। এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, “শুধু বাঙালি নয়, ভারতবর্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় দেশ। এখানে কোনও অঞ্চলের যে কোনও জায়গায় কেউ হেনস্তা হচ্ছেন, এটা আপত্তির কারণ। সে বাঙালি হোক বা পাঞ্জাবি হোক বা মাড়োয়ারি। আপত্তি থাকবেই। প্রথম কথা হল, সব মানুষকে সম্মান দেওয়ার উচিত। বিশেষত স্বদেশী মানুষের যে অধিকার আছে, তাঁদের মূল্য স্বীকার করতেই হবে। দুটোই প্রয়োজন আছে। তার উপর বাঙালিদের উপর যদি অত্যাচার হয়, অবহেলা হয়, যথেষ্ট আপত্তির কারণ থাকবে। অবহেলিত হলে নিশ্চয়ই বন্ধ করতে হবে। যাঁরা ভারতীয় তাঁদের পুরো ভারতবর্ষের উপর অধিকার আছে৷ শুধু একটা অঞ্চলের উপর নয়।”

    সম্প্রতি বোলপুর থেকেই বাংলা ভাষার উপর ‘সন্ত্রাসে’র প্রতিবাদে পদযাত্রার মাধ্যমে ‘ভাষা আন্দোলন’ সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের ছবির পাশাপাশি ছিল বাংলার বর্ণমালাও। সে প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বাংলা ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন শতাব্দী থেকে চর্যাপদ দিয়ে যে ভাষাটার জন্ম হল সেই ভাষার মূল্য স্বীকার করতেই হবে। তাঁর মাধ্যমে নানা কাব্য লেখা হল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম-সহ মনীষীদের সৃষ্টিকর্ম ? এগুলোর মূল্য দিতেই হবে। সেই মূল্য, তার প্রয়োজন যখন অবহেলিত হচ্ছে। একটা ভাষার যে মূল্য পাওয়া উচিত, সে মূল্য পান না। তার উপর একটা বড় রকম অবহেলা হয়, সেটা নিশ্চয়ই বন্ধ করতে হবে।”

    এরপর ভারতীয় সংবিধানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক সেনের বক্তব্য, “যারা ভারতীয় তাদের পুরো ভারতবর্ষের উপর অধিকার আছে। আর এটা শুধু একটা আঞ্চলিক অধিকার তা নয়।” বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের অত্যাচারের অভিযোগ শুনে তা নিয়েও কার্যত ক্ষোভপ্রকাশ করেন নবতিপর নোবেলজয়ী। বলেন, “ভিন রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর অত্যাচার হচ্ছে ও বাংলা ভাষার উপর আক্রমণ নেমে আসছে। কখনওই তা কাম্য নয়।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)