নিজস্ব প্রতিনিধি, শিলিগুড়ি: তিস্তা নদীর জলস্তর নামলেও প্লাবিত গ্রামগুলির অবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি ও হলদিবাড়ির প্লাবিত কিছু গ্রাম থেকে জল নামলেও জায়গায় জায়গায় ছিল থকথকে কাদা। আবার কিছু গ্রাম এখনও জলমগ্ন। একইসঙ্গে ময়নাগুড়ি ও নাগরাকাটায় নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দু’টি বাঁধ। এদিকে, ধসে ক্ষতিগ্রস্ত কার্শিয়াংয়ের দিলারামে ১১০ জাতীয় সড়ক। সেখানে রাস্তার একাংশ ধসে গিয়েছে। এই অবস্থায় পাহাড়ে জোর বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি ফের ঘোরালো হতে পারে বলে পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দাদের আশঙ্কা।
মিনি সচিবালয় উত্তরকন্যার বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, পাহাড়ে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমেছে। তিস্তা নদীর জলস্তরও কিছুটা কমেছে। ইতিমধ্যে কিছু ত্রাণ শিবির থেকে বাসিন্দারা বাড়িতে গিয়েছেন। তা হলেও আবহাওয়া ও নদীর গতিপথের উপর নজর রাখা হয়েছে। ত্রাণ শিবিরগুলিও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
টানা দু’দিন পর জলপাইগুড়িতে তিস্তা নদী কিছুটা শান্ত হয়েছে। স্রোতের তীব্রতা ও জলস্তর কিছুটা কমেছে। ক্রান্তি, মালবাজার ও কোচবিহারের হলদিবাড়ি ব্লকের প্লাবিত অধিকাংশ গ্রামের বাড়ি ও রাস্তা থেকে নদীর জল নেমেছে। তবে চাষের জমি এখনও জলমগ্ন। বিভিন্ন রাস্তার জায়গায় জায়গায় রয়েছে ঘোলা জল। কিছু জায়গায় জমেছে কাদা। তবে ক্রান্তির কিছু এলাকা এখনও জলমগ্ন। দুর্গতারা এখনও বাঁধের উপরে রাত কাটাচ্ছেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, পাহাড়ে ভারী বৃষ্টি হলে তিস্তা আবার ফুলেফেঁপে উঠতে পারে। তাহলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
জলপাইগুড়িতে তিস্তার জলস্তর বিপদসীমার নীচে নামলেও মেখলিগঞ্জে ফুঁসছে তিস্তা। সেচদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, মেখলিগঞ্জ থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত তিস্তার অরক্ষিত এলাকায় জলস্তর বিপদসীমার উপরে রয়েছে। তাই নদীর অসংরক্ষিত এলাকায় হলুদ সঙ্কেত জারি রয়েছে। জলঢাকা নদীর জলও বিপদসীমার উপরে রয়েছে। জলপাইগুড়ির ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের সুলকাপাড়া থেকে মাথাভাঙা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নদীর অরক্ষিত এলাকায় জারি করা হয়েছে হলুদ সঙ্কেত।
একইসঙ্গে জলপাইগুড়ির বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিন ময়নাগুড়ির ধর্মপুর পঞ্চায়েতের বাকালি বাঁধের ১৪৯ নম্বর স্পারের কাছে থাবা বসায় তিস্তা। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বাঁধের প্রায় ২৫ মিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুলকাপাড়ায় তুন্ডা চা বাগানের কাছে পাড় ভাঙছে জলঢাকা নদী। এদিন এ বিষয়ে উত্তরকন্যায় সেচদপ্তর রিপোর্ট পাঠিয়েছে। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিনে জলপাইগুড়ির কিছু জায়গায় বাঁধ ও নদীর পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সেগুলি মেরামত করা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, কালিম্পংগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের পর ধসে বিধ্বস্ত দার্জিলিংগামী ১১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। কয়েকদিন ধরে ধসে বিপর্যস্ত ছিল কালিম্পং ও সিকিমগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। সংশ্লিষ্ট সড়কের কোথাও পাহাড়ের উঁচু উপত্যকা থেকে হুড়মুড়িয়ে মাটি, পাথার, রাস্তার উপর পড়েছে। আবার কোথাও রাস্তার অংশ তিস্তা নদীর দিকে বসে গিয়েছে। এদিন অবশ্য সংশ্লিষ্ট রাস্তায় কিছু হয়নি। রাস্তাটি দিয়ে যান চলাচল করছে। এদিন দার্জিলিংগামী ১১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধসের কবলে পড়ে। এদিন কার্শিয়াংয়ের দিলারামে সংশ্লিষ্ট সড়কের একাংশ খাদের দিকে ধসে গিয়েছে। পূর্তদপ্তরের হাইওয়ে ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত ঠাকুর বলেন, রাস্তার সামান্য অংশ ধসে গিয়েছে। এতে রাস্তা বন্ধ হয়নি। জরুরি ভিত্তি বোল্ডার ও তারজালি দিয়ে ওই এলাকায় মেরামত করার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২৪ ঘণ্টায় দার্জিলিংয়ে ৫০ এবং কালিম্পংয়ে ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পেশক যাওয়ার পথে রাস্তার বেহাল দশা। - নিজস্ব চিত্র।