• কম্পিউটার শেখার আগ্রহে স্কুলমুখী চা বাগানের মেয়েরা
    বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: বাড়িতে টিভি, স্মার্ট ফোন নেই। কিন্তু স্কুলে গেলে মেলে একটা কম্পিউটার। মাউস হাতে সেই কম্পিউটারে নিজেদের স্বপ্ন আঁকে বিপাশা ওরাওঁ, খুশি ওরাওঁ, ইসানা ওরাওঁরা। রঙের ছটায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কম্পিউটারের এলইডি স্ক্রিন।

    এরা সবাই জলপাইগুড়ির ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের মেয়ে। প্রত্যেকেই কালিয়াগঞ্জ জুনিয়র গার্লস হাইস্কুলের পড়ুয়া। কারও বয়স ১১, কারও ১২ কিংবা ১৩ বছর। এদের বাবা-মায়েরা কখনও স্কুলের আঙিনায় পা রাখেননি। চা বাগানে পাতা তুলে কোনওমতে জোগাড় হয় পেটের ভাত। কারও আবার মা নেই। বাবা পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে গিয়েছেন ভিনরাজ্যে। কিন্তু ‘দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি’র শ্রমিক মহল্লায় ঝুপড়ি ঘরে বাস করেও বিপাশা, খুশি, ইসানাদের চোখে কার্যত আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন। ওরা প্রত্যেকেই ফার্স্ট লার্নিং জেনারেশন। পড়াশোনা, খেলাধুলো তো আছেই, সঙ্গে কম্পিউটার শেখার আগ্রহ স্কুলমুখী করেছে তাদের।

    প্রধান শিক্ষিকা তনয়া রায় বলেন, চা বাগানের মেয়েরা মাউস হাতে কম্পিউটারে এত ভালো আঁকতে পারছে দেখে মন ভরে যায়। ওদের কেউ কেউ কম্পিউটারে টাইপ করতেও শিখেছে। কম্পিউটারের টানে বাগানের মেয়েদের স্কুলে আসার আগ্রহ বাড়ছে।

    জলপাইগুড়ি শহর ও শহরতলিতে যেখানে জুনিয়র হাইস্কুলগুলি কার্যত পড়ুয়াশূন্য, সেখানে সদর ব্লকের কালিয়াগঞ্জ জুনিয়র গার্লস হাইস্কুলের ছবিটা কিছুটা হলেও আলাদা। পাশেই হাইস্কুল থাকা সত্ত্বেও এখানে ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। পড়ুয়ারা সবাই আশপাশের চা বাগানের।

    বুধবার স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, কম্পিউটার ক্লাসে যাওয়ার জন্য ছাত্রীদের মধ্যে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। দশটি কম্পিউটার। ফলে দশজনের বেশি ছাত্রী বসতে পারবে না। সেকারণে বাকিরা ঘরের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে। স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষিকা অর্চিতা চক্রবর্তী বলেন, চা বাগানে মেয়েদের মধ্যে কম্পিউটার শেখার আগ্রহ দেখে অভিভূত।

    ডেঙ্গুয়াঝাড় বড় লাইনের বাসিন্দা পঞ্চমের ছাত্রী বিপাশা ওরাওঁ। বাবা আকসো ওরাওঁ, মা হেমন্তী। দু’জনে বাগানে কাজ করেন। বিপাশা বলে, বাড়িতে টিভি, মোবাইল নেই। স্কুলে কম্পিউটারে ছবি আঁকতে খুব ভালো লাগে। বড় হয়ে কম্পিউটার বানাতে চাই। ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের বাসিন্দা পঞ্চমের আর এক ছাত্রী খুশি ওরাওঁ। তার বাবা রাজু ওরাওঁ ঢালাই মিস্ত্রি। মা কুইলি বাগানে কাজ করেন। খুশির ইচ্ছে, বড় হয়ে বাগানের সবাইকে কম্পিউটার শেখাবে সে। তবে হান্টুপাড়ার বাসিন্দা ইসানা ওরাওঁয়ের একটা আফশোস রয়েছে। চোখের জল মুছে সে বলে, সবার মা আছে। আমার মা যদি দেখতে পারত, কম্পিউটারে ছবি আঁকতে পারি!  কম্পিউটারে ছবি আঁকছে পড়ুয়ারা। কালিয়াগঞ্জ জুনিয়র গার্লস হাইস্কুলে। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)