সংবাদদাতা, কালনা: টিউশনি পড়তে না যাওয়ায় বাবা-মায়ের বকুনির ভয়ে বাক্সবন্দি খুদে পড়ুয়া। কালনা থানার পুলিসের তৎপরতায় প্রায় ১২ ঘণ্টা পর উদ্ধার আট বছরের এক নাবালক। পুলিস নাবালককে উদ্ধার করে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেছে। নাবালক সুস্থ আছে বলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
কালনা থানার অকালপৌষ পঞ্চায়েতের কুলেপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বছর আটেকের আর্জু সাঁতরা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বুধবার সন্ধ্যায় পাশের পাড়ায় টিউশন পড়তে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়। রাত ৮টা পার হয়ে গেলেও ছেলে বাড়ি ফিরছে না দেখে পরিবারের লোকেরা টিউশন শিক্ষকের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ওই নাবালক পড়তেই যায়নি। এরপরই চারিদিকে খোঁজ শুরু করে পরিবারের লোকজন। গভীর রাত পর্যন্ত খোঁজ চালিয়ে ছেলের খোঁজ না পেয়ে বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে কালনা থানার দারস্থ হন পরিবারের লোকেজন।
এর পর তদন্তে নামে কালনা থানার পুলিস। পুলিস ওই নাবালকের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে। নাবালকদের ঘরের সঙ্গেই ঠাকুমার ঘর রয়েছে। পুলিস প্রথমে ঠাকুমার ঘরে খোঁজ শুরু করে। যদিও পরিবারের লোকজন আগেই ওই ঘরে খোঁজ করেও ছেলেকে পায়নি। পুলিস ঠাকুমার ঘরে গিয়ে নাবালকের জুতো দেখতে পায়। এরপরই ঠাকুমার ঘরের চারদিক তন্নতন্ন করে খোঁজা শুরু করে। নাবালকের হদিশ না পেয়ে পুলিসও নিরাশ হয়ে পড়ে। সেইসময় ঘরের মধ্যে থাকা একটি টিনের ট্রাঙ্কের দিকে পুলিসের নজর যায়। ট্রাঙ্কটি খুলতেই পুলিস কর্মীরা অবাক। ট্রাঙ্কের ভেতর গুটিসুটি হয়ে শুয়ে আছে নাবালক আর্জু। পুলিস দেখে নাবালকের শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। তড়িঘড়ি পুলিস তাকে উদ্ধার করে কালনা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হওয়ায় কিছুক্ষণের মধ্যেই নাবালক কিছুটা সুস্থ হয়।
নাবালকের বাবা যীশু সাঁতরা বলেন, ছেলে পড়তে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল। ছেলে পাশের পাড়ায় সন্ধ্যায় পড়তে যায়। বুধবার রাত ৮টা বেজে গেলেও ছেলে ফিরছে না দেখে টিউশন শিক্ষকের কাছে জানতে পারি ও পড়তেই যায়নি। আমরা ওকে জিজ্ঞসাবাদ করে জানতে পারি টিউশন পড়তে যাওয়ার পথে একটি বাঁশতলা রয়েছে। ওখান দিয়ে রাতে যেতে ভয় পেত। কিন্তু, ভয় পাওয়ার বিষয়টি আমাদের কোনও দিন বলেনি। আমাদের অনুমান বাঁশতলা দিয়ে যেতে ভয় পাওয়ার কারণেই টিউশন পড়তে যায়নি। পাছে আমরা বকাবকি করি সেজন্য ভয়ে ট্রাঙ্কের ভেতর লুকিয়ে ছিল। আমরা ওই ঘরে অনেকবার খুঁজেছি। কিন্তু, ট্রাঙ্কের ভিতর থাকতে পারে কল্পনা করতে পারিনি। ছেলে এখন সুস্থ রয়েছে। পুলিসের জন্যই ছেলেকে জীবন্ত অবস্থায় ফিরে পেয়েছি।
কালনা থানার এক পুলিস অফিসার বলেন, এক নাবালক নিখোঁজের অভিযোগের পরই পুলিস খোঁজ শুরু করে। ঠাকুমার ঘরের ট্রাঙ্ক থেকে ওই নাবালককে উদ্ধার করা হয়েছে।-নিজস্ব চিত্র