ভিনরাজ্য থেকে মিলছে বরাত, উমার শোলার সাজ তৈরিতে ব্যস্ত বনকাপাশি
বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৫
অনিমেষ মণ্ডল, কাটোয়া: পুজোর আর দু’মাস বাকি। মঙ্গলকোটের বনকাপাশিতে শুরু হয়েছে ব্যস্ততা। এখন থেকেই দিল্লি, মুম্বই, অসম থেকে পুজোর বরাত আসতে শুরু করেছে। দুর্গা প্রতিমার জন্য শোলার সাজ তৈরির বরাত পাচ্ছেন শিল্পীরা। এমনকী, ঘর সাজানোর সামগ্রী তৈরি করে শিল্পীরা সারা বছর আয়ের পথ দেখাচ্ছেন। অন্য রাজ্যে কাজে যেতে হচ্ছে না গ্রামের যুবকদের।
মঙ্গলকোটের শোলাশিল্পের সুনাম দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়েছে। শোলার নানা সূক্ষ্ম কারুকার্য বিদেশেও শোভা পাচ্ছে। খুঁটিপুজো শুরু হতেই ভিন রাজ্যে থেকে পুজোর বরাত আসতে শুরু করেছে। রাজ্যের পাশাপাশি অসম, রেঙ্গালুরু, ত্রিপুরা, মুম্বই থেকে বরাত আসছে। বনকাপাশি গ্রামের শোলাশিল্পী প্রসাদ ঘোষ বলেন, ভিনরাজ্যে থেকে আমার কাছে ২০লক্ষ টাকার বরাত এসেছে। পুরোদমে পুজোর সাজ তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এক শিল্পী জানান, তাঁর কাছে পুজোর জন্য এখন থেকেই ১০লক্ষ টাকার বরাত এসেছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে সবাই এখন ব্যস্ত মা দুর্গার সাজ তৈরিতে।
প্রতি বছরই এই গ্রামের শোলাশিল্পীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বড় বড় প্রতিমা বা মণ্ডপ সাজাতে যান। শোলার বিভিন্ন ধরনের চাঁদমালা, শোলার উপর চুমকি বা জরি বসিয়ে প্রতিমার সাজ নিয়ে তাঁরা ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন। আবার শোলার তৈরি নানা শোপিস বিদেশেও পাড়ি দেয়। বনকাপাশি গ্রামে প্রায় আড়াই হাজার পরিবারের বাস। বর্তমানে গ্রামের প্রায় ৪০০টি পরিবার শোলাশিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। বাংলার জলাশয়ে হওয়া শোলা কেটে আঠা দিয়ে জরি, চুমকি বসিয়ে প্রতিমার সাজ তৈরি করা হয়। গ্রামের পুরুষ, মহিলা উভয়েই একসঙ্গে শোলার নানা সাজ, মডেল তৈরি করেন।
তবে বনকাপাশির শিল্পীরা বেশিরভাগই মাটির প্রতিমার সাজ তৈরি করেন। বংশ পরম্পরায় এই সাজ তৈরিতে প্রতিযোগিতা হয়। অনেকেই শোলা দিয়ে নানা মডেল তৈরি করে রাজ্য সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলিতে দেন। অনেকেই শোলা দিয়ে তৈরি নানা মডেল ঘরে সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। সেই চাহিদা বর্তমানে বাড়ছে। কিন্তু, গ্রামীণ শিল্পীরা প্রথাগত কাজের বাইরে যেতে চান না। তবে এখন প্রথাগত কাজের বাইরেও অনেকেই শোলার নানা মডেল তৈরি করেন। তাতে সারা বছর কাজ পান শিল্পীরা। ফলে ভিনরাজ্যে কাজ করতে যেতে হয় না গ্রামের যুবকদের। বনকাপাশি গ্রামের শোলাশিল্পী প্রদীপ মালাকার বলেন, আমি শোলা দিয়ে ছোট ছোট দুর্গার মূর্তি তৈরি করি। সেটা কাচের বাক্সে ভরে শোপিস তৈরি করি। বিশ্ব বাংলা থেকে পুজোর আগে প্রচুর বরাত এসেছে। এই কাজটা সারাবছরই আছে। গ্রামে যে পরিমাণ শোলার কাজ হয়, তাতে ভিনরাজ্যে কাজ করতে কাউকে যেতে হবে না।-নিজস্ব চিত্র