• বীরভূমে ‘এক স্বর, বাল্যবিবাহ, শ্রম রদ’ নাবালিকা বিয়ে রুখতে তৎপর জেলা প্রশাসন
    বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, সিউড়ি: জেলায় নাবালিকা অপহরণ, বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসন। এইসব কুপ্রথা ও অপরাধমূলক কাজ রোধ করতে বীরভূম প্রশাসন তৈরি করেছে রোডম্যাপ। তাছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে, যার শিরোনাম, ‘জেলাজুড়ে এক স্বর/বাল্যবিবাহ-শিশুশ্রম রদ কর’। বুধবার জেলা প্রশাসন ভবনে একটি সচেতনতা শিবির হয়। যেখানে সিউড়ি আরটি গার্লস স্কুলের পড়ুয়ারা অংশ নিয়েছিল। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) বিশ্বজিৎ মোদক, জেলা শিশু সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিক নিরুপম সিনহা সহ অন্যান্যরা।

    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাজুড়ে ক্রমেই নাবালক ও নাবালিকা নিখোঁজ, অপহরণ এবং পাচারের সংখ্যা বাড়ছে। মূলত নাবালিকা বিবাহ ও শিশুশ্রমের কারণেই এই সংখ্যা বৃদ্ধি। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, নাবালিকা বিবাহের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪-২০২৫ অর্থবর্ষে জেলায় নাবালিকা অপহরণের অভিযোগ হয়েছে ২৬৪টি এবং নাবালক অপহরণের অভিযোগ হয়েছে ১২টি। তার মধ্যে ২১৮ জন নাবালিকা এবং ১০ জন নাবালককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া নিখোঁজের অভিযোগ চোখে পড়ার মতো। গত অর্থবর্ষে নাবালিকা নিখোঁজের সংখ্যা হল ১১৬ এবং নাবালক ১৬ জন। তাদের মধ্যে ৯৫ নাবালিকা এবং ১৫ জন নাবালককে উদ্ধার করা হয়েছিল। এছাড়া গত অর্থবর্ষে ২ নাবালিকা পাচারের অভিযোগ হয়। তাদের এখনও উদ্ধার করা যায়নি। অন্যদিকে, চলতি অর্থবর্ষে জুন মাস পর্যন্ত নাবালিকা অপহরণের অভিযোগ ১০৪টি এবং নাবালক ৬ জন। তাদের মধ্যে ৮০ জন নাবালিকা এবং ৪ জন নাবালককে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া নাবালিকা নিখোঁজ ৪৩ এবং নাবালক নিখোঁজ ৩ জন। তাদের মধ্যে ৩১ জন নাবালিকা এবং নাবালক ২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। 

    জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মতে, জেলায় এই সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে দু’টি কারণ রয়েছে। একটি বাল্যবিবাহ এবং  শিশুশ্রম। তবে মূলত বাল্যবিবাহের জন্য এই পরিস্থিতি হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের মতে, জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় এখনও নাবালিকা বিবাহের প্রবণতা রয়েছে। তাই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি রোড ম্যাপ করা হয়েছে। তাতে রয়েছে চারটি স্তর। প্রথম স্তরে চিহ্নিতকরণ এবং দ্বিতীয় স্তরে হস্তক্ষেপ। এরপরেই কেন এই বাল্যবিবাহ কিংবা শিশুশ্রম হল সেটা দেখা। মূলত সামাজিক, নাকি অর্থনৈতিক কারণে এই ঘটনা সেটা দেখা। সব শেষে নজর রাখা যাতে ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। এই চারটি পদক্ষেপের মাধ্যমে এই পরিসংখ্যান নিম্নমুখী করতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, এই পদক্ষেপগুলির জন্য আমাদের গ্রাম সংসদ স্তরে টিম রয়েছে। সেই টিমের লোকবল বাড়ানোর প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে। এই নিয়ে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক নিরুপম সিনহা বলেন, বাল্য বিবাহ, বাল্যশ্রম ও শিশু পাচার রোধে তৎপর জেলা প্রশাসন। আমরা নানান পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেহেতু ৩০ জুলাই বিশ্ব মানব পাচার বিরোধী দিবস ছিল। তাই সেদিন জেলার নানা জায়গায় নানান কর্মসূচি হয়েছে। এদিনও সেই কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে এই সেমিনার হয়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) বিশ্বজিৎ মোদক বলেন, জেলা ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য আমরা সুরক্ষিত ভবিষ্যৎ তৈরি করতে চাই। বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম ও শিশু পাচার রুখতে প্রত্যেক মাসেই কর্মসূচি হয়। তারই অঙ্গ হিসাবে এদিনের কর্মসূচি হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)