গ্রাহকদের সতর্ক করছেন জেলা ক্রেতাসুরক্ষা দপ্তর, পুজোর আগে অনলাইন কেনাকাটায় বাড়ছে প্রতারণা, সক্রিয় অসাধু চক্র
বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: দু’ মাস পরই দুর্গাপুজো। সাধারণত এ সময়ে বাঙালির শপিং শুরু হয়ে যায়। কিন্তু দফায় দফায় নিম্নচাপের বৃষ্টিতে বাড়ি থেকে বেরনোই দায়। ফলে অনেকেই অনলাইন শপিংয়ের দিকে ঝুঁকেছেন। বাড়িতে বসে পচ্ছন্দসই জিনিস কিনতে পারছেন গৃহবধূরা। কিন্তু অর্ডারি জিনিসটি হাতে পাওয়ার পর তাজ্জব বনে যাচ্ছেন অনেকে। অনলাইনে ছবিতে দেখানো পোশাকের সঙ্গে ডেলিভারি করা পোশাকের কোনও মিল নেই! অনেক সময়ে মিল থাকলেও, সেগুলি ছেঁড়াফাটা। কেউ আবার সংখ্যায় কম প্রোডাক্ট পাচ্ছেন। ফেরত দিতে গিয়েও সমস্যায় পড়ছেন গ্রাহকরা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ।
অনেকেই অনলাইনে জিনিস কিনতে গিয়ে আগাম পেমেন্ট করেন। আবার অনেকে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ করেন। ডেলিভারি ম্যান সোজা বাড়িতে সেই জিনিস পৌঁছে দিচ্ছে। সেই সুবিধাকে হাতিয়ার করে প্রতারণার ঘটনা বাড়ছে।
রামপুরহাটের নৃত্যশিল্পী বর্ণালী রায় বলেন, দিন পাঁচেক আগে একটি নামী অনলাইন সংস্থা থেকে আগাম পেমেন্ট করে ছ’টা প্রোডাক্ট কিনি। ২৯ জুলাই হাতে পাই। কিন্তু প্যাকেট খুলে দেখি একটি প্রোডাক্ট। অথচ প্যাকেটের গায়ে ছ’টা প্রোডাক্টই লেখা রয়েছে। সেই টাকা পেতে কালঘাম ছোটে। অবশেষে ফেসবুকে ওই কোম্পানির নামে লেখালেখি করতেই পাঁচটি প্রোডাক্টের দাম ফেরত দেয়। তিনি বলেন, আমার মতো অনেকের সঙ্গেই এমন ঘটেছে। অনেকে টাকা ফেরত পাননি।
পায়েল ঘোষাল নামে এক ক্রেতার অভিজ্ঞতা যথেষ্ট উদ্বেগের। তিনি নৃত্যশিল্পীর পোস্টে কমেন্ট করেছেন, কয়েক মাস আগে তাঁর সঙ্গেও এমনটা ঘটেছিল। টাকা রিফান্ডের বদলে অ্যাকাউণ্ট হ্যাক করে ১২ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়।
আর এক গৃহবধূ ঊমা পাল বলেন, অনলাইনে যে সাইজের পোশাকের অর্ডার দিয়েছিলাম ডেলিভারির সময়ে তার থেকে অেনক বড় প্রোডাক্ট দিল। তারপর কিছুতেই ফেরতে নিতে চাইছে না। প্রায় দেড় হাজার টাকা গচ্চা গিয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংস্থার কাস্টমার কেয়ারও কোনও কথা শুনছে না। কার্যত জোর করে তাঁদের বিক্রি না হওয়া জিনিসপত্র গজিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। আবার অনেক ক্ষেত্রে ছবির সঙ্গে বাস্তব রঙের মিল থাকছে না। ক্ষুণ্ণ হচ্ছে ক্রেতাস্বার্থ। মানহীন পণ্য বিক্রি, এক পণ্য ডিসপ্লে করে অন্য পণ্য দেওয়া এবং অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ।
জেলা কনজিউমার ওয়েলফেয়ার অফিসার বিধূভূষণ সাহা বলেন, ১৯৮৬ ক্রেতা সুরক্ষা আইন অনুযায়ী অনলাইনে কেনাকাটা করে কেউ ঠকে গেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও জায়গা ছিল না। ২০২০ সালের ২০ জুলাই থেকে নতুন আইন কার্যকর হয়েছে। সেখানে পরিষ্কার বলা আছে, কেউ অনলাইনে কেনকাটা করে ঠকে গেলে সংস্থার নামে অভিযোগ করতে পারবেন। ওই সংস্থাকে ডেকে সমাধান না হলে কনজিউমার ফোরামে বিষয়টি পাঠানো হবে। সে ক্ষেত্রে জিনিসের অর্থ ফেরত ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আছে। তাঁর পরামর্শ, আনপ্যাক করার সময়ে ভিডিও করে রাখুন। সেটা পরবর্তীকালে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে।