সংবাদদাতা, রামপুরহাট: এসআইআর আতঙ্ক থেকে রামপুরহাট ও নলহাটি পুরসভায় জন্ম সার্টিফিকেট নিতে ও সংশোধন করানোর হিড়িক পড়েছে। বিহারের পর পশ্চিমবঙ্গেও ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধনে নামতে পারে নির্বাচন কমিশন। এমন আশঙ্কা থেকে জন্ম সার্টিফিকেট আগেভাগেই জোগাড় করে রাখতে চাইছেন অনেকে।
এতদিন ভোটার তালিকায় নাম তুলতে জন্ম তারিখ এবং বাসস্থানের প্রমাণই যথেষ্ট ছিল। এবার নতুন নিয়মে শুধু জন্মের তারিখ নয়, কোথায় সংশ্লিষ্ট ভোটারের জন্ম হয়েছে, তার প্রমাণও সংযুক্ত করতে হবে। এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে সেই তথ্য সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখবেন বুথ লেভেল অফিসাররা। নতুন নিয়মের এই অংশটি নিয়েই রাজনৈতিক পারদ চড়তে শুরু করেছে। দু’ দিন আগেই ইলামবাজারের সভা থেকে এই নিয়ে হুঁশিয়ারির সুর শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। সোচ্চার হয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
কিন্তু এসআইআর নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। জন্ম সার্টিফিকেট নিতে বা সংশোধনের জন্য রামপুরহাট ও নলহাটি পুরসভাগুলিতে ভিড় বাড়ছে মানুষের। পুরসভা খোলার আগে থেকেই শংসাপত্র নিতে মানুষ দাঁড়িয়ে থাকছেন। রামপুরহাট পুরসভার জন্ম ও মৃত্যুর সার্টিফিকেট প্রদান বিভাগের দায়িত্বে থাকা শুভেন্দু সিনহা বলেন, জন্ম শংসাপত্র তোলার হিড়িক ব্যাপক। বয়স্ক লোকেরা বেশি আসছেন। তাঁদের কেউ জন্ম সার্টিফিকেট নিতে, কেউবা ডিজিট্যাল সার্টিফিকেট নিতে আসছেন। কেউ বা পাসপোর্ট করাতে চেয়ে জন্ম সার্টিফিকেট নিতে আসছেন। যেগুলির রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে, সেগুলি করে দিচ্ছি। আর যাদের রেকর্ড নেই, তাঁদের নতুন করে আবেদন করতে বলছি।
অন্যদিকে নলহাটি পুরসভার জন্ম, মৃত্যু সার্টিফিকেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিকাশ মুনি বলেন, অনেকে শংসাপত্র নিতে আসছেন। ২০০৪ সালের পর থেকে হলে আমরা তদন্ত করে দিচ্ছি। তার আগে হলে বিএমওএইচ তদন্ত করবে। তাছাড়া নার্সিংহোমে জন্ম হলে আমরা সার্টিফিকেট দিই। এর বাইরে বিডিও অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়া কেউ নাম সংশোধন করতে আসছেন। সেক্ষেত্রে সাপোর্টিং ডকুমেন্ট দেখা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আমরা যে সময় জন্মেছি সেই সময়ে সার্টিফিকেটের খুব একটা প্রয়োজন পড়ত না। স্কুলে মুখে বলেই ভর্তি হওয়া যেত। এখন সেই সার্টিফিকেট খুজে পাচ্ছি না। এদিকে বলছে নির্বাচন কমিশনের লোকেরা বাড়ি বাড়ি সার্ভে করে জন্ম সার্টিফিকেট না পেলে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দিয়ে দেবে। এখন সেটাই চিন্তার বিষয়।
রামপুরহাটের বছর পঞ্চাশের এক প্রৌঢ় বলেন, বাড়িতেই জন্ম হয়েছিল। বাবা ও মাও এখন বেঁচে নেই। সেই সময়ে সার্টিফিকেট নেওয়া হয়েছিল কি না, সেটাও জানি না। কারণ, এতদিন জন্মের সার্টিফিকেটের সেভাবে প্রয়োজন পড়েনি। এখন বলছে ওই সার্টিফিকেট থাকা নাকি বাধ্যতামূলক। পুরসভাতেও রেকর্ড নেই। জানি না কী হবে। তৃণমূলের জেলা চেয়ারপার্সন তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এসআইআর নিয়ে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। স্বাভাবিকভাবেই পুরসভাগুলিতে ভিড় বাড়ছে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী খুব জোরালো ভাবে বলেছেন, একজনও বৈধ ভোটারের নাম যেন বাদ না যায়।