নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: ‘কেস গন্ডগোলে আছে, দ্বিতীয় পোস্ট মর্টেম লাগবে।’ পুরুলিয়ার আড়ষায় যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে এভাবেই অসন্তোষ প্রকাশ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি। রিপোর্টে একাধিক অসঙ্গতি তুলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় বিচারপতিকে। পাশাপাশি, আগামী ৪ আগস্ট কেস ডায়েরি নিয়ে পুলিসকে তলব করেছেন বিচারপতি। ঘটনায় নতুন করে শোরগোল শুরু হয়েছে জেলাজুড়ে।
উল্লেখ্য, মোবাইল চুরির অভিযোগে গত ১৬ জুলাই আড়ষার বাসিন্দা বিষ্ণু কুমারকে (৩৪) থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ১৯ জুলাই যুবকের মৃত্যু হয়। যুবকের পরিবারের অভিযোগ, থানায় বিষ্ণুকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। থানা থেকে বাড়ি ফেরার পর সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তিনদিন পর তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিসের মারধরের কারণেই বিষ্ণুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তোলে তার পরিবার। এনিয়ে ই মেল মারফত থানায় অভিযোগের পাশাপাশি হাইকোর্টের দ্বারস্থও হয় বিষ্ণুর পরিবার। শুধু তাই নয়, ২০ জুলাই দেহের ময়নাতদন্ত হলেও আজও তা গ্রহণ করেনি বিষ্ণুর পরিবার। দেহ রয়েছে পুরুলিয়া মেডিক্যালের মর্গেই। দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্তের দাবি তুলেছে বিষ্ণুর পরিবার। তবে মারধরের বিষয়টি মানতে চায়নি পুলিস। প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়া মাত্রই গত ২১ জুলাই একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন জেলার পুলিস সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, ‘ভিডিওগ্রাফি করে ওই যুবকের দেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে ওই যুবকের দেহে অত্যাচারের কোনও প্রমাণ মেলেনি। যুবকের লিভার, কিডনি এবং হার্টের অসুস্থতাজনিত কারণই মৃত্যু হয়েছে।’
যদিও বৃহস্পতিবার ওই মামলার শুনানিতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়েই প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষকে। রিপোর্টে একাধিক ‘খুঁত’ বের করে প্রশ্ন তোলেন তিনি। রাজ্যের আইনজীবীকে তিনি বলেন, ‘এই রিপোর্টে আমি একদমই সন্তুষ্ট নয়।’ এই মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতি। এই মামলার অন্যতম আইনজীবী সাগ্নিকা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘পুলিস খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে, অথচ পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে একেবারে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে উল্লেখ রয়েছে। এতেই খটকা লেগেছে বিচারপতি। তাছাড়া, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে বলে মনে হয়েছে বিচারপতির। সেই কারণেই দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত প্রয়োজন বলেও তিনি জানিয়েছেন। আপাতত তিনি দেহটি সংরক্ষণ করতে বলেছেন। আগামী ৪ আগস্ট সোমবার মামলার শুনানি রয়েছে। ওইদিন পুলিসকে কেস ডায়েরি নিয়ে তলব করেছেন।’
জেলার পুলিস সুপার বলেন, ‘এখনও আদালতের নির্দেশ পাইনি। ঘটনার তদন্ত চলছে। আদালত যে রকম নির্দেশ দেবে, সেইমতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ বিজেপির জেলা সহ সভাপতি গৌতম রায় বলেন, ‘৩৪ বছরের একজন তরতাজা যুবককে পুলিস খুন করেছে। দোষ ঢাকতে নিজেদের মতো করে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তৈরি করেছিল। কিন্তু বিচারপতি তা ধরে ফেলেছেন। সত্যের জয় হল।’ সিপিএমের যুব সংগঠনের সভাপতি সুব্রত মাহাত বলেন, ‘সত্য আড়াল করতে সবরকম চেষ্টা করেছিল তৃণমূলের দলদাস পুলিস। যদিও তা চাপা থাকল না।’ সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘বিষ্ণুর মৃত্যুর প্রতিবাদে বনধ পালন করতে গিয়ে বহু নিরীহ মানুষকে পুলিস আটকে রেখেছে। তাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’