শুভ্র চট্টোপাধ্যায়. কলকাতা: কোন সামগ্রী করতে হবে বাজেয়াপ্ত, আর কোন জিনিসটা পাঠাতে হবে ফরেন্সিক পরীক্ষায়! ক্রাইম সিনে পৌঁছে ঠিক কী করণীয়, তা ঠিক বুঝতে পারছেন না নিচুতলার পুলিস কর্মীরা। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) নতুন ধারায় ‘সিজার লিস্ট’ তৈরি করতে গিয়ে রীতিমতো কালঘাম ছুটছে তাঁদের। অনেক ক্ষেত্রে বিস্তর খামতি থেকে যাচ্ছে। যার জেরে আদালতে গিয়ে ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হচ্ছে পুলিসকে। বিচারপর্বে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে মামলা। সেই কারণে ক্রাইম সিনে গিয়ে ঠিক কী কী করতে হবে পুলিস কর্মীকে, তা নিয়ে প্রশিক্ষণের বিশেষ কোর্স শুরু করল রাজ্য পুলিস। মাথাপিছু ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে বারাসতের পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই কোর্স করতে হবে। প্রশিক্ষণে যাওয়া কর্মীর কোর্স ফি মেটাতে হবে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিসকে।
খুন, ডাকাতি, ধর্ষণ থেকে শুরু করে যে কোনও অপরাধের ক্ষেত্রে ‘প্লেস অব অকারেন্স’ তদন্তের দিশা ঠিক করে দেয়। অনেক লুকিয়ে থাকা প্রশ্ন ও পিছনে কারণ কী রয়েছে, তার উত্তর দেয়। সেখানে থেকে অপরাধীদের ফেলে যাওয়া বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ অর্থাৎ ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফুটপ্রিন্ট, রক্তের নমুনা, পিস্তল বা রিভলভারের ব্যবহৃত গুলি, মার্ডার ওয়েপেনের খোঁজ চালান তদন্তকারীরা। যেগুলি তদন্তের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনাস্থল ভালোভাবে সংরক্ষণ অর্থাৎ ঘিরে রাখার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। যাতে সেখান থেকে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা এসে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ পান। যার ভিত্তিতে প্রমাণ করা যায়, সংশ্লিষ্ট ঘটনার সঙ্গে অপরাধীর যোগ রয়েছে। একইসঙ্গে আধুনিক তদন্ত প্রক্রিয়ায় ঘটনাস্থলে ফেলে যাওয়া ডিজিটাল এভিডেন্স অর্থাৎ মোবাইলের মতো জিনিসের ফরেন্সিক পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিএনএসএস চালু হওয়ার পর বাজেয়াপ্তের পুরো প্রক্রিয়ার ‘আনকাট ভিডিও’ করতে হয়।
রাজ্য পুলিসের কর্তাদের নজরে এসেছে, অপরাধের তদন্তে গিয়ে কোন জিনিস বাজেয়াপ্ত করতে হবে, আর কোনটি বাদ দিতে হবে এই ভেদাভেদ করতে পারছেন না তদন্তকারীদের অনেকেই। কীভাবে ঘটনাস্থলে ফিঙ্গার বা ফুট প্রিন্ট সংরক্ষণ করতে হবে, তা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। ফরেন্সিক আসার আগেই ঘটনাস্থল সাফ করে ফেলা হচ্ছে। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত বা অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তির মোবাইলের ‘হ্যাশ ভ্যালু’ ঠিকমতো হচ্ছে না। যে কারণে ডিজিটাল এভিডেন্স ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এই কারণে আদালতে পুলিসের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা এই ফাঁককে ব্যবহার করে জামিন করিয়ে নিচ্ছেন মক্কেলের। সেই কারণে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিটি জেলার অফিসারদের ক্রাইম সিন ম্যানেজমেন্ট ও ফরেন্সিক সায়েন্সের উপর বিশেষ কোর্স করানো হবে। যাতে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে পুলিস কর্মীরা কাজ করতে পারেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় তারা এই কোর্স চালু করেছে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কোর্স ফি। ইতিমধ্যেই প্রতিটি জেলা পুলিস এবং কমিশনারেট এই খাতে টাকা চেয়ে অর্থ দপ্তরের কাছে চিঠি পাঠাতে শুরু করেছে। বরাদ্দকৃত অর্থে যাতে সকলকেই কোর্স করানো যায়।