হাইকোর্টের সময়সীমা অমান্য মোদি সরকারের, বঞ্চনার রাজনীতি! পশ্চিমবঙ্গে শুরু হল না ১০০ দিনের কাজ
বর্তমান | ০১ আগস্ট ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আজ ১ আগস্ট। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের কড়া নির্দেশ ছিল, এই তারিখ থেকেই বাংলায় ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পটি পুনরায় চালু করতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। কিন্তু সেই নির্দেশই সার! গত ১৮ জুন এই নির্দেশের পর কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় মাস। কিন্তু মোদি সরকার কোনও উচ্চবাচ্য করছে না। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফেও কিছু জানানো হয়নি রাজ্যকে। ফলে আজ, শুক্রবার থেকে কাজ শুরুর কোনও সম্ভাবনা নেই। হাইকোর্টের নির্দেশ সরাসরি অমান্য করল কেন্দ্র— এমনটা ধরেই নিচ্ছে রাজ্য সরকার। মোদি সরকারের বঞ্চনার রাজনীতিতে যারপরনাই হতাশ গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ!
বৃহস্পতিবার সেই নিয়ে রীতিমতো আক্ষেপ করছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ ব্লকের চাঁপালী অঞ্চলের বাসিন্দা আকাশি সরদার। তিনি ও জবকার্ড হোল্ডার। বলছিলেন, ‘আমরা প্রান্তিক এলাকায় বাস করি। স্বামী দিনমজুর। মাঝে মাঝে মাছ ধরে। এ দিয়ে কি আর সংসার চলে? আগে ১০০ দিনের কাজ করে মাসে হাজার দুয়েক টাকা হাতে পেতাম। তাতে সংসারের অনেকটা অভাব ঘুচত। তাই আদালতের রায়ের কথা জানতে পেরেই বিডিও-র কাছে গিয়ে কাজের জন্য আবেদন জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে তো কিছুই লাভ হল না।’ ওই অঞ্চলের আর এক জবকার্ড হোল্ডার হরিপদ মণ্ডল তো রীতিমতো রেগেই গিয়েছেন। তাঁর সংসার যে আর চলে না। হরিপদর কথায়, ‘শুনেছিলাম ১০০ দিনের কাজ ফের চালু হচ্ছে। আশা করেছিলাম, ফের কাজ পাব। কিন্তু আজও তো কেউ কিছু জানাল না। আদৌ কি কাজ মিলবে? নাকি আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে আগাগোড়াই বঞ্চিত থেকে যাব?’ শুধু আকাশি বা হরিপদ নয়, বাংলার প্রতিটি জবকার্ড হোল্ডারের মুখে এখন এই একই প্রশ্ন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও কীভাবে বাংলার প্রান্তিক মানুষকে ১০০ দিনের কাজ থেকে বঞ্চিত করে রাখতে পারে মোদি সরকার?
হাইকোর্টের নির্দেশের পর কাজ পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন মিনাখাঁর আকাশি-হরিপদদের মতো অনেকে। পুরুলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন ব্লকের ১,৬০৫ জন জবকার্ড হোল্ডার আবেদন জমা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিডিও অফিসে। কিন্তু, কোনও হেলদোলই নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। সম্প্রতি বীরভূমের প্রশাসনিক সভা থেকে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের এই দুয়োরানিসুলভ আচরণ নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারও বলেছেন, ‘ওরা আমাদের দেওয়া তথ্য-পরিসংখ্যান মেনে নিয়েও টাকা দেননি। এখন কলকাতা হাইকোর্টের রায়কেই গ্রাহ্য করছে না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না। পরপর ভোটে হারের বদলা নিতেই যে ওরা টাকা আটকে রেখেছে, এটা স্পষ্ট।
বাংলায় এই কাজ পুনরায় চালু করতে আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ খেতমজদুর সমিতি। সংগঠনের আহ্বায়ক অনুরাধা তলোয়ার জানিয়েছেন, শুক্রবারই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে এই আদালত অবমাননার বিষয়টি তুলে ধরবেন তাঁদের আইনজীবী। তুলে ধরা হবে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীন মনোভাবের কথাও। তিনি আরও বলেন, ‘যতদিন না বাংলার মানুষ নিজেদের হকের কাজ পাচ্ছেন, ততদিন লড়াই চালিয়ে যাব।’
দুর্নীতির অভিযোগে ২০২২ সালের ৯ মার্চ থেকে বাংলার ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করে দিয়েছে মোদি সরকার। বর্তমানে এই প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া ৪৪ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। হাইকোর্ট সাফ জানিয়েছিল, ১০০ দিনের কাজের জন্য বরাদ্দ টাকা কোথায় কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, কোথাও দুর্নীতি হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য কেন্দ্রের পর্যাপ্ত ক্ষমতা রয়েছে। কেন্দ্র সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করুক। কিন্তু এই প্রকল্পের কাজ চালু রাখতে হবে। কারণ মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা আইনে কোথাও বলা নেই যে, অর্থের অনিয়ম হলে অনির্দিষ্টকাল প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে। তাতেও কর্ণপাত করল না মোদি সরকার।