কোচবিহার ও তুফানগঞ্জ: দিনহাটার উত্তম ব্রজবাসী, মাথাভাঙার নিশিকান্ত দাসের পরে, এ বার কোচবিহারের আরও দুই বাসিন্দার এনআরসি নোটিস পাওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে এল। তুফানগঞ্জ ২ ব্লকের বাঁশরাজা গ্রামের ৬০ বছরের মোমিনা বিবির কাছে সব মিলিয়ে অসম ফরেনার্স ট্রাইবুনালের তেমন নোটিস এসেছে তিন বার। শেষ নোটিস তিন মাস আগের। বুধবার গ্রামীণ পুলিশ বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার জেলা তৃণমূলের নেতারা যান। অভিযোগের আঙুল তোলেন বিজেপির দিকে। তবে বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, এ ক্ষেত্রে ভয়ের কিছু নেই। তৃণমূল মিথ্যা ভয় দেখাচ্ছে। রাতে জানা যায়, তুফানগঞ্জের যুবক দীপঙ্কর সরকারও কিছু দিন আগে এনআরসি নোটিস পেয়েছেন। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক জানিয়েছেন, আজ, শুক্রবার ওই বাড়িতেও যাবেন তিনি।
মোমিনার বাপেরবাড়ি বাঁশরাজা গ্রামে। বৃদ্ধা জানান, বয়স যখন ১৮, সেই সময়ে অসমের ধুবুড়ি জেলার আগমনিতে বিয়ে হয়। এক বছর সেখানে ছিলেন। বিবাহ বিচ্ছেদের পরে বাপের বাড়িতে ফেরেন। ওই এলাকাতেই আজিমুদ্দিন মিয়াঁর সঙ্গে ফের বিয়ে হয়।
অসম প্রশাসনের প্রথম নোটিস আসে ২০২৪ সালে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে মোমিনা অবৈধ ভাবে এ দেশে এসে অসমে ছিলেন বলে দাবি করা হয়। মোমিনা বলেন, “প্রায় ৪০ বছর আগে অসম থেকে ফিরেছি। ভোটার কার্ড, আধার কার্ড আছে।” তাঁর পড়শি হাফিজা বিবি বলেন, “মোমিনাকে ছোট থেকে চিনি। ও কেন বাংলাদেশি হতে যাবে?” মোমিনার বড় ছেলে মোজাম্মেল মিয়াঁ বলেন, “কেন মাকে নোটিস পাঠানো হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।”
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি এ দিন পরিবারটির সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “গত লোকসভা ভোটে কোচবিহারের মানুষের রায় বিজেপির দিল্লির নেতারা মেনে নিতে পারেননি। তাই রাজবংশী, অ-রাজবংশী, সংখ্যালঘু— সব সম্প্রদায়ের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়াতে নোটিস পাঠানো হচ্ছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা দিল্লির নেতাদের কথায় এমন করছেন।” তবে বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ বর্মণ বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। পরিকল্পিত ভাবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তৃণমূল। অসমে বিয়ে হয়েছিল ওই বৃদ্ধার। সে ক্ষেত্রে নথি দেখালে সমস্যা মিটে যাবে।”
নথি দেখাতে অসমে যাবেন কি?
মোমিনা বলেন, “বিনা কারণে তিনটে নোটিস পাঠিয়েছে অসম থেকে। আমি অসমে যাব না।”