• যত বড় খ্যাতনামীই হোক না কেন, আমার ছবি করতে এলে কাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকতে হবে: সুমন
    আনন্দবাজার | ০১ আগস্ট ২০২৫
  • নবারুণ ভট্টাচার্য থেকে রবীন্দ্রনাথ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আশাপূর্ণা দেবী হয়ে এ বার মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনি বরাবর সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারায় বিশ্বাসী। নিজের গল্প নিয়ে ছবি করার কথা মনে হয় না?

    সুমন: আমি যখন সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ করছি, তখন লেখকের মূল কাহিনি রেখে কাজ করছি। এই ধারায় সাহিত্য যখন চলচ্চিত্রে আসছে সেখানে আমি তার পুনর্নির্মাণ করছি, নিঃসন্দেহে তা আমার সৃষ্টি। আমি মনে করি না নিজে গল্প লিখলে তা স্বতন্ত্র চলচ্চিত্র হিসাবে দেখা হবে। আপনাকে বরং প্রশ্ন করি, ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘অযান্ত্রিক’, ‘গডফাদার’ কি স্বতন্ত্র নয়? এই ছবিগুলি তো সাহিত্য থেকেই নেওয়া। বাংলা চলচ্চিত্রের ধারা দেখলে বোঝা যাবে সত্যজিৎ, মৃণাল, তরুণ মজুমদার সকলের সঙ্গেই সাহিত্যের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। সেখান থেকেই তাঁরা গল্প নিয়ে ছবি করেছেন। আমাদের বাঙালিদের মধ্যে, জমির মধ্যে, বেড়ে ওঠার মধ্যে, হয়ে ওঠার মধ্যে সাহিত্য নির্যাস আছে। সেই নির্যাস ছবিতে ধরা পড়েছে। আর এই কাজ করলে কারও শৈল্পিক উৎকর্ষ কমে যায় বলে আমি মনে করি না। তা ছাড়া আমি বিশ্বাস করি বাঙালির সঙ্গে সাহিত্যের সুনিবিড় সম্পর্ক আছে।

    সত্যিই কি আছে?

    সুমন: এখনও আছে। এ কথা ঠিক আজকাল দর্শক কী দেখবে, তা বেছে নেওয়ার অনেক সুযোগ তার কাছে রয়েছে। ফলে বইয়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তবুও বলব, বাঙালির ঘরে আজও রবীন্দ্র রচনাবলী থাকে।

    সে তো সাজিয়ে রাখার জন্য!

    সুমন: তবুও তো আছে। সাধারণ বাঙালি মানুষ এখনও রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনে। শেখে। আমি বলতে চাইছি বাঙালি যাপনের মধ্যে সাহিত্য ঘিরে ভালবাসা এখনও রয়েছে। সেই জায়গা থেকে সাহিত্যনির্ভর ছবির দর্শক থাকবে বলে আমার বিশ্বাস।

    ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ ছবি উপন্যাসের কোন কোন জায়গা বাদ দিল?

    সুমন: ‘পুতুলনাচের...’ ক্ষেত্রে আমি শশীর জীবনের দিক থেকে গল্প বলেছি। শশীর অনুষঙ্গে যে যে চরিত্র এসছে, তারা ছবিতে আছে। আমি যেমন কুমুদের গল্প এই ছবিতে বড় করে বলিনি। বরং শশীর মানসপটে যে সমাজ, যে অন্য নারীরা এসেছে তাঁদের সঙ্গে শশীর সম্পর্ক নিয়ে ছবি করেছি।

    শশীর সঙ্গে সুমনের মিল আছে?

    সুমন: শশীর সঙ্গে আমার সেই কলেজে পড়ার সময় থেকেই এক ধারার আত্মিক সংযোগ আছে। শশীর যে দ্বন্দ্ব ‘টু বি অর নট টু বি’, পরিসর আলাদা হলেও এই মননের সঙ্গে আমি হ্যামলেটের মিল পাই। সংবেদনশীল মানুষ, যার মধ্যে সূক্ষ্মতা আছে তার মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে পড়বেই। সাধারণ মানুষের মনে দ্বন্দ্ব আসে না। চরিত্রের এই দ্বান্দ্বিক প্রবণতার জন্যই উপন্যাস কালোত্তীর্ণ হয়। যেমন হ্যামলেট, ম্যাকবেথ। ওথেলোকেও যদি দেখি, দেখব তার মধ্যে সন্দেহপ্রবণতা ছিল। স্ত্রীকে সে সন্দেহ করত। সেই ছ’-সাতশো বছরের পুরনো ওথেলো আজও কিন্তু প্রাসঙ্গিক। হিন্দিতেও তাকে নিয়ে ছবি হয়েছে। এই আদিম মানুষের রাগ, ক্ষমতা, সন্দেহপ্রবণতা, সব আজও থেকে গিয়েছে। এই চরিত্রেরা আমাদের আশপাশেই ঘুরছে। সেই জায়গা থেকেই ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ আজকের সময় ধরতে পারবে।

    আপনি ক্ষমতার কথা বললেন, মনে করেন পুরুষ ক্ষমতাশালী হলে সে ভাবে, সে ক্ষমতা দিয়ে যে কোনও নারীকে লাভ করতে পারে?

    সুমন: আপনার প্রশ্ন ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ প্রসঙ্গ থেকে হয়তো খানিক বেরিয়ে গেল।

    আপনি মানবিক জটিলতাকে আপনার বিভিন্ন ছবিতে সরাসরি তুলে ধরেছেন, শশীর দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন মনে এল…

    সুমন: সঙ্গত। এই প্রশ্নের উত্তর ‘পুতুলনাচের...’ প্রেক্ষিতই দিচ্ছি— শশীর সঙ্গে কুসুমের যে রসায়ন, তার মধ্যে আত্মম্ভরিতা রয়েছে। শশী শহর থেকে আসা গ্রামের চিকিৎসক। আর কুসুম সেই গ্রামের মেয়ে। তার মধ্যে অনেক স্বাভাবিক, মানবিক জটিলতা রয়েছে। সে তার যৌন আকর্ষণ লুকিয়ে রাখে না। ওই সময়ের এক গ্রাম্য পরিবেশে এ ছবির দুই নারী চরিত্রই এত দৃঢ় স্বতন্ত্র! ভাবলেই অবাক হই। এক কুসুম আর এক সেনদিদি। কুসুম শশীর সামনে যে খোলামেলা যৌনগন্ধী প্রস্তাব রাখছে, তাতে মোটেও স্বচ্ছন্দ নয় শশী। তার মধ্যে এক ধরনের শহুরে ‘রোম্যান্টিক ইন্টেলেকচুয়ালিজ়ম’ আছে। যার ফলে, কুসুমের আড়াল না রেখে শরীর সম্পর্কিত প্রশ্নকে সে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। তার শিক্ষিত শহুরে বুদ্ধিমত্তা ভাবতে শেখেনি, যে গ্রামের এক পড়ালেখা না জানা নারী, সরাসরি তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইবে।

    কুসুমের এই খোলামেলা যৌনতা ছবিতে কী ভাবে দেখা যাবে?

    সুমন: নারী হিসাবে কুসুমের অধিকার এবং সম্মানবোধ বড়ই গভীর। আমি সেই চরিত্রকেই ছবিতে রাখার চেষ্টা করেছি। এমন দৃশ্যকল্প তৈরি করেছি যেখানে কুসুম খোলা মনে তার প্রেমের কথা ভালোবাসার মানুষকে জানায়, আর সেটা কিন্তু তার দুর্বলতা নয়। এ প্রসঙ্গে আকিরা কুরোসাওয়ার গল্প মনে পড়ছে।

    বলুন না…

    সুমন: কুরোসাওয়া নিজের জীবনের গল্প বলেছিলেন। তিনি যখন সৈন্যদলে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন, বাাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পরে যখন পিছন ফিরে তাকালেন। তখন দেখলেন, তাঁর মা হাউহাউ করে কাঁদছেন, আর বাবা সোজা তাকিয়ে আছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, মা চোখের জলের মাধ্যমে তাঁর আবেগ প্রকাশ করতে পারছেন। কিন্তু বাবা তা পারছেন না। ঠিক যেমন শশী কুসুমের প্রতি তার যৌন আকর্ষণ থাকলেও কোনও আড়াল না করে প্রকাশ করতে পারে না। কুসুম চরিত্র কিন্তু এই ধারণাগুলোকে উত্তীর্ণ করে দেয়। আবার গল্পের সেনদিদি এক নারী চরিত্র, বিবাহের মধ্যে থেকে সন্তান সম্ভাবনা হয়। ওই গ্রামীণ সমাজে থেকে তার এই অবস্থান তার অধিকারের কথাই মনে করায়। আমার ছবির এই দুই নারী চরিত্রই নিজেদের প্রয়োজনের কথা নির্দ্বিধায় জানাতে পারছে, যেটা কিনা অনেক ক্ষেত্রে সমাজের ক্ষেত্রে একটা বড় আঘাত। এই ছবিতে সেই ভাবনা খুব বড় করে আছে।

    শুধু ছবি নির্মাণ নয়, নাটক, পড়াশোনা বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করছেন আপনি। সে কারণে দেশে-বিদেশে যাতায়াত করতে হয়। বাংলা ছবি এখনও কি সত্যজিৎ, ঋত্বিক, মৃণালে আটকে আছে?

    সুমন: সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ— এই পর্যায় পর্যন্ত আন্তর্জাতিক জগতের সঙ্গে বাংলা ছবির একটা সংলাপ বজায় ছিল। এঁদের ছবি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হত। এই যোগাযোগ ক্রমাগত ক্ষীণ হয়েছে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে তাদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এখন সেটা নেই।

    কিন্তু এখন তো যোগাযোগেরই সময়, যোগাযোগ কোনও সমস্যা হতে পারে?

    সুমন: না, যোগাযোগটা তো শিল্প-কর্ম দিয়ে হবে, আমাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ফেসবুকের সম্পর্ক দিয়ে হবে না। রটারডাম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যখন ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ দেখানো হল তখন আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম। আমার দেশের ছবি, আমার দেশের কথা— দর্শক কী ভাবে দেখবে, চিন্তা ছিল। দর্শকের মধ্যে এক-দু’জন বোধহয় ভারতীয় ছিলেন। ৯৯ ভাগ ইউরোপীয়। দেখলাম তারা বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি, শিকড়, সমাজকেই দেখতে চায়।

    মানুষ কি এখন শিকড়ের গল্প খোঁজে?

    সুমন: বাংলার কথা যদি বলি, আমাদের দেশের মানুষের সঙ্গে মাটির যে যোগাযোগ— তাদের খাদ্য সংস্কৃতি, তাদের সমাজ জীবন, এই জীবনটাই কিন্তু স্বতন্ত্র। সে পৌরাণিক সময়ই হোক বা আধুনিক সময়। এই যে সংস্কৃতির নিজস্ব ভাষা পাশ্চাত্যে পৌঁছোচ্ছে, তখন তাদের কাছে একটা অন্য রকম কিছু বোধ হচ্ছে। তাদের মনে হচ্ছে, আমরা এক ভাবে ভারতবর্ষকে দেখতাম, ভারতবর্ষে এটাও? ভারতবর্ষের মধ্যে তো কত ভাগ, কত বৈচিত্র, আমরা এখন অবশ্য সব কিছুকে এক করে দেখার বহুল চেষ্টা করছি। এখন যেমন বলি, ‘ইন্ডিয়ান ফুড’, বলুন তো ভারতীয় খাবার বলে কিছু হয়?

    ভারতীয় খাবার বলে যেটা চলে সেটা তো উত্তর ভারতের খাবার…

    সুমন: একেবারেই তাই। যে ভাবে হিন্দিও জাতীয় ভাষা হতে পারে না। শিল্প যত শিকড়ের দিকে যায় ততই তার গ্রহণযোগ্যতা। তাই বলে শিকড় বলতে শুধু গ্রাম বাংলা দেখিয়ে দিলাম সেটাও কিন্তু নয়। আমাদের সমাজের সমকালীন মানুষের অস্তিত্বের যাপনের যে গল্প সেগুলি কিন্তু আগ্রহ বাড়ায়।

    তা হলে আপনি বলতে চাইছেন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকে বাংলা ছবি সরে আসার জন্য দায়ী শিল্পকর্ম…

    সুমন: ২০০০ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতের আঙ্গিনায় অনেক বদল ঘটেছে। আমরা কোথাও যেন সে বদলগুলির সঙ্গে মিশে যেতে পারছি না। আটকে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমার যে খুব স্পষ্ট ধারণা আছে, তা নয়। আমি নিজের মতো করে চেষ্টা করেছি। তবে আমার ছবি তো দেশে দ্রুত মুক্তি পায় না। আমার শেষ ছবি ছিল ‘অসমাপ্ত’। সময় ছিল ২০১৭ সালে। একটা ছবি বানিয়েছি ‘নজরবন্দী’ সেটা মুক্তি পায়নি। প্রায় আট বছর পরে ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ আসছে।

    এটা তো হওয়ার কথা নয়…

    সুমন: আমি যে ছবি বানাতে চাই সে ছবির প্রযোজক পাই না, ‘পুতুলনাচের...’ জন্য ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। তারপরে ক্যালাইডোস্কোপ এগিয়ে এসেছে। আমি যে ছবি বানাতে চাই সেখানে শৈল্পিক ভাবে তো কোথাও সমঝোতা করব না। আমার মতো করে যদি প্রযোজক আমায় ছবি বানাতে দেন, আমি করব। নয়তো ছবি করব না। আমি তখন পড়াতে যাব, নাটক করব, অন্য কাজ করব। অনেক লেখাই পড়ে রয়েছে। নিজের লেখা কাজও পড়ে রয়েছে। আবার এটাও ঠিক আমাদের দেশের মানুষের কথাও তো ভাবতে হবে। আসলে যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছি আমরা প্রযোজকদের দোষ দিয়েও লাভ নেই। তারাও অসহায়। তাদেরও তো দেখতে হবে যে ছবিটা কী ভাবে বিক্রি করবেন! দর্শকের টাকা থেকে তো আর ছবির লভ্যাংশ সব সময় আসে না।

    দর্শকসংখ্যা কমে যাচ্ছে?

    সুমন: অর্থনীতিরও একটা দিক রয়েছে। প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবি দেখার যে খরচ, সেটাও তো ভাবতে হবে। অনেকেই হয়তো ভাবছেন প্রেক্ষাগৃহে খরচ করে ছবি দেখে কী লাভ, যদি ছবি ভাল না লাগে? সে ক্ষেত্রে তাঁরা ভাবছেন যে ওটিটি-তে তো ছবি আসবেই। তখন না হয় দেখে নেব।

    প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ না হলেও আপনার নাটক হলে আসন সংখ্যা পূর্ণ হয়ে যায়…

    সুমন: ঠিক। তবে থিয়েটারে একটা সময় একটাই অভিনয় হয়। থিয়েটার করতে এত টাকাও লাগে না। সিনেমা অনেক বড় বিষয়, অনেক টাকা লাগে। নাটকের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না।

    সুমন মুখোপাধ্যায়ের ছবির তৈরি দর্শক আছে। এটা ভাবতে কেমন লাগে?

    সুমন: ভালই লাগে। তবে একদম সত্যি কথা বলছি, আমার শিল্পের প্রতি ভাল লাগা থেকে যাঁরা আমার ছবি দেখতে চান শুধু তাঁদের দিয়ে কি দু’কোটি টাকার বাজেটের ছবির লভ্যাংশ উঠে আসবে? আমার সংশয় আছে।

    কখনও দেব, জিৎ, মিমি, শুভশ্রীকে নিয়ে ছবি করার কথা ভেবেছেন?

    সুমন: এঁরা প্রত্যেকেই সিনেমায় ভাল কাজ করতে চান। আমার কোনও আপত্তি নেই ওঁদের সঙ্গে কাজ করতে। ছবিতে কাজ করতে গেলে সবাইকে একটা মননে আসতে হয়। ‘পুতুলনাচ...’ করতে গিয়ে দেখেছি আবীর, ধৃতিমানদা, জয়া, অনন্যা এমনকি পোশাক পরিকল্পক শুচিস্মিতা, ক্যামেরার সায়ক— সকলের এক ধারার মননের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন। সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে এই ছবি হয়েছে। এবং ছবিটা তৈরি হতে হতে প্রত্যেকে বুঝতে পারেন তাঁরা, অন্য রকম কিছু করছেন।

    সুমন মুখোপাধ্যায় মানে মেধা, রুচিশীল অভিজাত মানুষ, আপনার সম্পর্কে এমন ধারণা আছে

    সুমন: আমার তো এ সব শুনে ভাল লাগে। তবে ‘পুতুলনাচের...’ উদাহরণ দিয়েই বলি, শুটিংয়ের পর এমন নয় যে, আমরা শুধু সারা ক্ষণ গম্ভীর হয়ে সাহিত্য আলোচনা করেছিলাম। আবার সারা রাত জেগে দুর্দান্ত পার্টি করেছি, এমনও নয়। মানে এমন কিছু হয়নি, যাতে ছবি তৈরি হতে হতে যে একটা বুনট তৈরি হচ্ছে সেটা ভেঙে যায়। আমার কোনও ‘স্টার’কে নিয়ে ছবি করতে অসুবিধা নেই। আবীর কি কম বড় তারকা?

    কিন্তু মনে হয়, সুমন মুখোপাধ্যায় আবীর, পরমকে নিয়ে ছবি করবেন, জিৎ বা দেব নয় …

    সুমন: জিতের সঙ্গে আমার তেমন যোগাযোগ নেই। দেবকে আমি বলেও রেখেছি, ও আগ্রহ দেখালে আমরা ছবি করব। ‘বুনোহাস’-এ ওর চরিত্র ভাল লেগেছিল। আমি মনে করব সে যত বড় ‘স্টার’ হোক, আমার দলে এসে যখন সে ছবি করবে, সেই ছবিটার প্রতি যে দায়বদ্ধতা সেই মনোযোগটুকু সে দেবে।

    আপনার গুণমুগ্ধ নারী ভক্তদের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা আছে?

    সুমন: (হেসে) আমার কেবল শিল্পের প্রতি দায়বদ্ধতা রয়েছে।

    কুসুমের মতো যদি কেউ খোলামেলা প্রেম প্রস্তাব দেয় আপনাকে?

    সুমন: চল্লিশ বছর হয়ে গেল নাটক, সিনেমার জগতে আছি। এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে, তার ধরনটাও আলাদা হবে। কেউ যদি বলে, ‘আপনার সামনে দাঁড়ালে আমার কেমন যেন হয়’! আমার প্রতিক্রিয়া কী হবে জানি না! সেটা তো নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপর।

    প্রেমের ক্ষেত্রে মন এবং শরীর দুটোই থাকতে হবে?

    সুমন: দুটোই থাকতে হবে। আসলে প্রেম অনেক ধরনের হয়। এই প্রশ্নের এক কথায় সদুত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। যে সম্পর্ক শরীরের সম্পর্ক, সেখানেও একটা মন কিন্তু আছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)