বর্ষার প্রকোপে নাজেহাল কুমোরটুলি, ছোট্ট দুর্গা দেখতে ভিড় জমছে পটুয়াপাড়ায়
দৈনিক স্টেটসম্যান | ০১ আগস্ট ২০২৫
আর মাত্র মাস দেড়েকের অপেক্ষা। আর তারপরেই উমা ফিরবেন তাঁর বাপের বাড়ি। তাই তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের প্রাক্কালে কুমোরটুলির প্রতিটা গলি সেজে উঠেছে অগণিত মাতৃপ্রতিমায়। চূড়ান্ত ব্যস্ততায় দিন কাটছে মৃৎশিল্পীদের। তবে দেবীপক্ষের আগেই ঠিক যেন অসুররূপে হাজির হয়েছে বৃষ্টি। অবিরাম বর্ষণে শহরের রাস্তা-ঘাট যেমন বেহাল, তেমনই দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মৃৎশিল্পীদের কপালেও। বৃষ্টির জল থেকে মূর্তি বাঁচাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন শিল্পীরা।
কুমোরটুলির গলি দিয়ে কিছুটা এগোলেই দেখা মিলবে শিল্পী দীপঙ্কর পালের মূর্তি গড়ার কারখানার। এ বছর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দীপঙ্করের হাতে গড়ে ওঠা কুমারীরূপী মাতৃপ্রতিমা। খড়ের গায়ে মাটির প্রলেপ লেগে সবেমাত্র প্রতিমার আকারে গড়ে উঠেছেন দেবী। মাটি এখনও ভেজা। কিন্তু তবুও দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন ভিড় জমাচ্ছেন এই প্রতিমা দেখার জন্য। আসানসোল উন্নয়ন সমিতির দুর্গাপুজোর জন্য গড়ে উঠছে এই প্রতিমা। জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকেই মূর্তি বানানোর কাজে হাত দিয়েছেন শিল্পী। দেবীমূর্তির অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছেন সকলেই। তবে দুশ্চিন্তার আধার ছুঁয়েছে শিল্পী দীপঙ্করকেও। অনবরত বৃষ্টিতে প্রতিমা শুকোনোর কাজ বারংবার ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পীর কথায়, ‘পাখা চালিয়ে কিংবা তাপ দিয়ে আমরা মাটি শুকানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে শুকানো এবং কৃত্রিমভাবে শুকানোর মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। বৃষ্টির হাত থেকে মূর্তিকে বাঁচাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি আমরা। ত্রিপল দিয়ে ঢেকে কোনওরকমে মূর্তিকে জলের হাত থেকে বাঁচাচ্ছি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না।’
সরকারের তরফে একটা করে ত্রিপল দেওয়া হয়েছে মৃৎশিল্পীদের। কিন্তু একটা মাত্র ত্রিপল দিয়ে জলের হাত থেকে মূর্তিকে বাঁচানো কার্যত অসম্ভব বলে মত মৃৎশিল্পীদের। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সময়ে শ্রমিকরা এসে পৌঁছান কুমোরটুলিতে। মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শ্রমিক-শিল্পীরা আসেন দীপঙ্কর পালের কারখানায়। সেখানে থেকেই কাজ করেন তাঁরা। তবে প্রবল বর্ষণের ফলে রোগের প্রকোপ বেড়েছে। শিল্পী জানান, সাধারণ ঠান্ডা লাগা থেকে শুরু করে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া লেগেই রয়েছে শ্রমিকদের মধ্যে। নিয়মিত মশা মারার রাসায়নিক ও ব্লিচিং পাউডার ছড়ালে রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমবে। বিশেষ করে যে শ্রমিকরা দূরদূরান্ত থেকে এসে কাজের সূত্রে কুমোরটুলিতে থাকেন, তাঁদের জন্য অন্তত একটা মশারির বন্দোবস্ত করলে অনেকটাই সুফল মিলবে।
কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশের মুখে একটা কথাই ঘুরছে। অভিমানের সুরে তাঁরা বলেছেন, প্যান্ডেল থেকে শুরু করে আলোকসজ্জা, সবটাই মহাসমারোহে হচ্ছে। কিন্তু মূর্তি বায়না করার সময়েই পুজো কমিটিগুলোর বাজেটে টান পড়ছে। চলতি বছরে ‘বর্ষাসুরের’ সঙ্গে তাল মিলিয়ে দরকষাকষিও বিভ্রান্ত করেছে মৃৎশিল্পীদের। তাই শিল্পীদের আশা, পুজোর আগের কয়েকটা সপ্তাহে যেন অন্তত রোদের মুখ দেখতে পায় কুমোরটুলি। সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির বাজারে যেন কিছুটা সদয় হয় পুজো কমিটিগুলোও।