অর্ণব আইচ: ভারতীয় জাল পরিচয়পত্র দেখিয়ে লিভ ইন পার্টনারের সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতায় সম্পত্তি কিনেছিলেন বাংলাদেশের মডেল তথা অভিনেত্রী শান্তা পাল। দক্ষিণ কলকাতায় ওই সম্পত্তি কেনা হয় বলে পুলিশের কাছে খবর। এই তথ্য পুলিশ যাচাই করছে। এমনকী, ভুয়ো নথি দেখিয়ে তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের ওই যুবককে ‘ডিজিটাল বিয়ে’ করেছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন। যদিও ‘ডিজিটাল বিয়ে’ বলে বিয়ের কোনও পদ্ধতি পুলিশের সামনে আসেনি।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে কলকাতায় এসে ভুয়ো আধার ও ভোটার কার্ড তৈরি করে ভুয়ো ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার চেষ্টা করে লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেপ্তার হন শান্তা পাল। ওই যুবতী একসময় বাংলাদেশের বিমান সংস্থায় চাকরি করলেও তিনি বাংলাদেশের নামী মডেল ছিলেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। বাংলাদেশের একাধিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জিতেছিলেন শান্তা। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের হয়ে ইন্দো বাংলা বিউটি প্রেজেন্টে যোগ দেন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে মিস এশিয়া গ্লোবাল হন। শুরু করেছিলেন অভিনয়ও। এর মধ্যেই যোগ দেন বাংলাদেশের বিমান সংস্থায়।
যদিও ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ ২০২১’ প্রতিযোগিতায় নেমে ঢাকায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন শান্তা। ওই সময় থেকে বিমান সংস্থার চাকরিও করতেন না। এমনকী, গত দু’বছরে তামিল ছবি ও টলিউডের বাংলা ছবিতে শান্তা অভিনয় করেছিলেন। সই করেছিলেন ওড়িয়া ছবিতেও। এরপর কয়েকটি সিরিয়ালেও অভিনয়ের চেষ্টা করছিলেন শান্তা। সোশাল মিডিয়ায় এমনভাবে নিজের পরিচয় দিতেন, যাতে তাঁকে বাংলাদেশি বলে আদৌ মনে না হয়। তবে অন্ধ্রপ্রদেশের বাসিন্দা আশরফ নামে মার্চেন্ট নেভির কর্মী এক যুবকের সঙ্গে সোশাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব হওয়ার পরই তাঁর জীবনের মোড় ঘোরে বলে শান্তার দাবি।
২০২৩ সালে বরিশালের শান্তা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে কলকাতায় আসেন। বন্ধু আশরফকেও নিয়ে আসেন কলকাতায়। দু’জন মিলে প্রথমে পার্ক স্ট্রিট ও পরে গল্ফগ্রিন এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে লিভ-ইন করতে শুরু করেন। অন্ধ্রপ্রদেশের ভেঙ্গালাকাড এলাকার বাসিন্দা আশরফের পাসপোর্ট নিজের কাছে রাখেন শান্তা। দালালচক্রের হাত ধরে প্রথমে রেশন কার্ড তৈরি করান। যদিও কলকাতায় যাতায়াতের সময় থেকেই ২০২০ সালে নিজেকে বর্ধমানের বরশুল এলাকার গোপালপুরের বাসিন্দা বলে দাবি করে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ভুয়ো আধার কার্ডও তৈরি করান। পরে গল্ফগ্রিনের ঠিকানায় তৈরি হয় অন্য একটি আধার কার্ড। তৈরি হয় শান্তার ভুয়ো ভোটার কার্ড ও প্যান কার্ডও।
লালবাজারের গোয়েন্দাদের কাছে খবর, বন্ধুর নথি ও নিজের ভুয়ো নথি জমা দিয়ে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা খরচ করে সম্পত্তি কেনেন। কলকাতায় থাকাকালীন বন্ধুর হাত ধরেই তামিল ছবিতে অভিনয় করেন। তার আগে শান্তা ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ’ নামে একটি বাংলাদেশি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। টলিউডের একটি বাংলা ছবিতে অভিনয় করলেও সেটি রিলিজ করেনি। একটি ওড়িয়া ও একটি তেলুগু ছবি করারও কথা ছিল। তবে ভুয়ো পরিচয়পত্র দিয়েই সম্পত্তি কিনে কলকাতায় পাকাপাকি থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন শান্তা ও তাঁর বন্ধু আশরফ। পুলিশের জেরার মুখে দাবি করেন, তাঁদের ‘ডিজিটাল বিয়ে’ হয়েছে। যদিও বিয়ের এই ধরনের কোনও পদ্ধতি পুলিশ জানতে পারেনি। এদিকে, পুলিশ জেনেছে, ২০২১ সালে ‘মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতায় নাম লেখানোর পর জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে যান শান্তা পাল। কিন্তু তিনি অভিযোগ করেন যে, তাঁর মতো কয়েকজনকে বাদ দিয়ে জয়ী হিসাবে বাংলাদেশের একটি ব্যাঙ্কের কর্মকর্তার প্রেমিকাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। তিনি এই ব্যাপারে ঢাকার মহানগর আদালতে মামলাও করেছিলেন। ওই সময় শান্তা সোশাল মিডিয়ায় আত্মহত্যার হুমকি দেন। শান্তা বাংলাদেশে থাকাকালীনই টলিউডের এক পরিচালকের বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ তুলেছিলেন।