টানা বৃষ্টিতে রাজ্যের শস্যগোলায় মাথায় হাত কৃষকদের! নতুন করে জল-আতঙ্ক পূর্ব বর্ধমান ও বাঁকুড়ায়
আনন্দবাজার | ০১ আগস্ট ২০২৫
গত দেড় মাস ধরে বৃষ্টিতে বিপাকে ‘শস্যগোলা’ পূর্ব বর্ধমান জেলা। জেলার দক্ষিণ দামোদরের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমি এখন জলের তলায়। সদ্য রোপণ করা আমন ধানের চারা বৃষ্টির জলে ডুবেছে। নষ্ট হওায়ার মুখে বীজতলাও। একই জল-যন্ত্রণায় বাঁকুড়াও। জলে ডুবে আছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সেতু। শালি নদীর জলে পাত্রসায়রে প্লাবিত হাজার হাজার বিঘা জমি। মাথায় হাত কৃষকদের।
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর, রায়না-১ ও ২, খণ্ডঘোষ— এই চারটি ব্লকের বহু প্রান্তিক অঞ্চলে একই পরিস্থিতি। মাঠের দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই, কোথায় নদী আর কোথায় ফসলের জমি। টানা বৃষ্টির জেরে জল বেরনোর কোনও পথ নেই। জমা জলে নষ্ট হতে বসেছে চারা থেকে বীজতলা। রায়নার বাসিন্দা এবং পেশায় কৃষক সেখ ফিরোজ বলেন, ‘‘আষাঢ় মাসের শুরুতেই বীজ ফেলা হয়েছে। এখন বীজ বেশ বড় হয়ে উঠেছে। অথচ এত জলে আমরা রোপণের কাজ শুরুই করতে পারছি না।’’ স্বপন ঘোষ নামে এক কৃষক বলেন, ‘‘ডিভিসির ক্যানেল থাকায় কিছুটা জল বেরোচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তাতে মোটেই পর্যাপ্ত সুরাহা হচ্ছে না।’’
আবহাওয়া দফতর থেকে আরও চার থেকে পাঁচ দিন ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়ায় চিন্তা বেড়েছে। কৃষকদের আশঙ্কা, এই ভাবে জল জমে থাকলে আমন চাষে ব্যাপক ক্ষতি হবে। জেলা কৃষি আধিকারিক অমরকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘জুলাই মাসে গড় বৃষ্টি হয় ২৭৩ মিলিমিটার। কিন্তু এ বছর জুলাইয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪৯০.৩ মিলিলিটার। অর্থাৎ, ৮১.৭৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে শুধু জুলাই মাসে। স্থানীয় সূত্রে খবর, এ বছর জেলায় আমন ধানের চাষ হওয়ার কথা ছিল ৩ লক্ষ ৭৭ হেক্টর জমিতে। এখনও পর্যন্ত রোয়া হয়েছে ২ লক্ষ ৮৬.৮৩২ হেক্টর জমিতে। শতাংশের বিচারে ৬৮ শতাংশ জমিতে রোয়ার কাজ হয়েছে। জেলার কৃষি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, অতি বর্ষণে জেলার পাঁচটি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জামালপুর, রায়না-১, রায়না-২, খণ্ডঘোষ ও গলসি-২ ব্লকের ধানচাষে ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে জামালপুরে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের ক্ষতি হয়েছে। আমন চাষে ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ২৭২ হেক্টর জমিতে।
অন্য দিকে, গত কয়েক দিনে জল বেড়েছে বাঁকুড়ার সব নদীতেই। শুক্রবার দেখা গিয়েছে জলে ডুবে গন্ধেশ্বরী ও দ্বারকেশ্বর নদের একাধিক সেতু। শালি নদীর জলে প্লাবিত বাঁকুড়ার পাত্রসায়ের ব্লকের হাজার হাজার বিঘে কৃষিজমি। একাধিক রাস্তা জলের তলায় চলে যাওয়ায় রাস্তাগুলি দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। গত বুধবার থেকে বাঁকুড়া জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ৭৮ মিলিমিটার। কম সময়ে এই ভারী বৃষ্টিতে বৃহস্পতিবার থেকে আবার জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে বাঁকুড়ার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া গন্ধেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শালি-সহ সবক’টি নদীতে। গন্ধেশ্বরীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় জলের তলায় মানকানালি সেতু। ফলে ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত বন্ধ। এ ছাড়া দ্বারকেশ্বর নদের কেঞ্জাকুড়া, মীনাপুর ও ভাদুল সেতুও জলের তলায়।
নদীর জল ঢুকে গিয়েছে পাত্রসায়ের ব্লকের নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের জলজলা, কমলাসায়র ও পটাশপুর গ্রাম লাগোয়া কয়েকশো বিঘা জমির উপর দিয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতা দিয়ে বইছে শালি নদীর জল। প্লাবিত হয়েছে নারায়ণপুর থেকে ধগড়িয়া যাওয়ার রাস্তা। চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছেন স্কুল কলেজ পড়ুয়া থেকে শুরু করে নিত্যযাত্রীরা। টানা বৃষ্টি কবে শেষ হবে? তাকিয়ে সকলে।