• রাস্তা অবরোধ তুলতে এসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য বিডিও’র, চরম বিতর্ক
    বর্তমান | ০২ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি ও সংবাদদাতা, রাজগঞ্জ: ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার না লাগলে আমার কাছে প্রেয়ার দিয়ে দেবেন। নাম কেটে দেব। ১০০ জন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ছাড়লে ওই টাকায় রাস্তা হয়ে যাবে।’ শুক্রবার শিকারপুর পঞ্চায়েত এলাকায় অবরোধ তুলতে গিয়ে বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে এমনই বেফাঁস মন্তব্য করার অভিযোগ উঠল রাজগঞ্জের বিডিও প্রশান্ত বর্মনের বিরুদ্ধে। তাঁর ওই মন্তব্যের ভিডিও মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক দানা বেঁধেছে। একইসঙ্গে ওই ভিডিও ঘিরে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়েছে প্রশাসনিক মহলে। একজন বিডিও হয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে এমন মন্তব্য আদৌও করতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 

    সূত্রের খবর, রাজগঞ্জের বিডিও রাজ্য সরকারের অত্যন্ত জনপ্রিয় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প নিয়ে কেন এমন মন্তব্য করেছেন, সেই ব্যাপারে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের কর্তারা তাঁর কাছে কৈফিয়ৎ চেয়েছেন। বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের কানেও পৌঁছেছে। যদিও এনিয়ে জেলাশাসক শমা পারভীনের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। মেসেজ করে জানতে চাওয়া হলেও উত্তর দেননি। কোনওরকম মন্তব্য করতে চাননি জলপাইগুড়ি সদরের এসডিও তমোজিৎ চক্রবর্তীও। রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায় বলেন, আদৌও বিষয়টি ঠিক কী হয়েছে, তা বিডিও’র কাছ থেকে জানার পরই এনিয়ে বলতে পারব। বিডিও’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। যদিও শিকারপুরে এদিনের অবরোধের পিছনে বিজেপির ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ তাঁর। এদিকে, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে শোরগোল শুরু হতেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে তাঁর মন্তব্য প্রসঙ্গে এদিন সন্ধ্যায় সাফাই দিয়ে রাজগঞ্জের বিডিও বলেন, আমি রাস্তা অবরোধ তুলতে গিয়েছিলাম। সেসময় এলাকার মহিলারা খুব চিৎকার চেঁচামেচি করছিলেন। আমি তাঁদের বুঝিয়ে বলি, আপনারা রাজ্য সরকারের সমস্ত প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পাচ্ছেন। রাস্তাও হবে। তখন কিছু মহিলা বলেন, আমরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার চাই না। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলি, আপনারা যদি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিতে না চান, প্রেয়ার দেবেন। বিডিও’র দাবি, যদি কেউ বলেন, সরকারি প্রকল্প তিনি নিতে চান না, সেক্ষেত্রে আমি কী বলব! ১০০ জন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ছাড়লে, সেই টাকায় রাস্তা হয়ে যাবে, এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে বিডিও’র সাফাই, আমি বলতে চেয়েছি, ১০০ জন যদি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিতে না চান, সেক্ষেত্রে সেই টাকায় অন্যরা ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন। তাঁর দাবি, যে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে এদিন অবরোধ হয়, সেটি অ্যাকশন প্ল্যানে ধরা আছে। শীঘ্রই সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। 

    ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিকারপুর পঞ্চায়েতের নর্থবেঙ্গল ফার্ম এলাকায় ৩ কিমি রাস্তা বেহাল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহুবার আবেদন করেও লাভ হয়নি। সেকারণে বাধ্য হয়ে এদিন অবরোধ করেন তাঁরা। পুলিস আসে। শুরু হয় বচসা। অবরোধকারীরা রাস্তায় বসে পড়েন। তখনই হাজির হন বিডিও। তাঁর মন্তব্য ঘিরেই ছড়ায় বিতর্ক। 

    তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সভানেত্রী মহুয়া গোপ বলেন, রাস্তা খারাপ থাকলে সংস্কার হবে। কিন্তু লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো জনমুখী প্রকল্পের কথা কেন রাস্তার প্রসঙ্গে বিডিও বললেন, জানি না। এ ধরনের কথা বিডিও বলতে পারেন না। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)