সংবাদদাতা, দিনহাটা: দিনহাটা শহরের অন্যতম পরিচিত নেতা সুদেব কর্মকারকে নিয়ে উত্তাল তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহল। সম্প্রতি বিজেপির নবনিযুক্ত রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকে ফুলের তোড়া দিয়ে তাঁর শুভেচ্ছা জানানোর ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরপরই দলের অন্দরে শুরু হয়েছে জোর সমালোচনা।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দিনহাটা কেন্দ্রে কেবল ৫৭ ভোটে হেরে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী তথা বর্তমান উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ। সেইবার বিজেপির প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন তৎকালীন কোচবিহার লোকসভার সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। কিন্তু পরে তিনি বিধায়ক পদে ইস্তফা দেন, যার জেরে ওই কেন্দ্রে উপ নির্বাচন করা হয়। ঠিক সেই সময় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন সুদেব কর্মকার।
উপ নির্বাচনে উদয়ন গুহ বিপুল ভোটে জয়ী হন এবং সুদেব কর্মকার দলবদলের পুরস্কার স্বরূপ তৃণমূলের কোচবিহার জেলা কমিটি ও দিনহাটা শহর ব্লক কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হন। তবে সবকিছু বদলে যেতে থাকে এক ভাইরাল ছবি ঘিরে। শমীক ভট্টাচার্য বিজেপির রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান সুদেব কর্মকার। সেই মুহূর্তের ছবিই ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠতে থাকে—সুদেব এখন কোন দলে?
মন্ত্রীপুত্র সায়ন্তন গুহ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে সোচ্চার হয়েছেন বিষয়টি নিয়ে। তিনি লিখেছেন, রাজনীতি করতে গেলে মেরুদণ্ডটার খুব প্রয়োজন। দল কেউ পরিবর্তন করতেই পারেন, গণতান্ত্রিক অধিকার। সেটা বুক বাজিয়ে বলার সৎ সাহসটুকু তো থাকা উচিত।
এই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সুদেববাবুর বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে। যদিও কে বা কারা এই হামলা চালিয়েছে, তা বুঝতে পারেনি সুদেববাবুর পরিবার। দিনহাটা থানায় অভিযোগও দায়ের হয়নি। দল পরিবর্তনের অভিযোগ অস্বীকার করে সুদেব কর্মকার বলেন, আমি এখনও তৃণমূলেই আছি। কেউ আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ওই ছবি ছড়িয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার কোনও প্রশ্নই নেই।
তবে তাঁর ব্যাখ্যায় কান দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব। দিনহাটা শহর ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিশু ধর বলেন, সুদেবের মতো নেতারা এলেন কী গেলেন, তাতে দলের কিছু যায় আসে না। তবে দলে থেকে কেউ সুযোগ নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করলে কর্মীরা ক্ষুব্ধ হবেই।
কোচবিহার জেলা বিজেপির সভাপতি অভিজিৎ বর্মন বলেন, অনেক কর্মী ভুল বুঝে বা চাপে পড়ে তৃণমূলে গিয়েছিলেন। এখন তাঁরা আবার ফিরে আসতে চাইছেন। সুদেব কর্মকার কারও হাতে ফুল দিতে পারেন, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে যাঁরা সত্যিকারের বিজেপি মননে বিশ্বাস করেন, তাঁদের স্বাগত জানাব আমরা।