• টানা বৃষ্টির মধ্যেই জল ছাড়ছে ডিভিসি
    বর্তমান | ০২ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। তারউপর ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের ধান ও সব্জি চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডিভিসি জল ছাড়ায় আরামবাগের পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। মায়াপুরে আরামবাগ-কলকাতা রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে জল বইছে। রূপনারায়ণ, মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদরে জলস্তর বেড়েছে। তার পাশাপাশি বুধ এবং বৃহস্পতিবার অধিকাংশ জেলাতেই ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। বহু ধানের জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। তাতে রোয়া ধানগাছের চারা পচে যাবে। আবার জল নামলেও নতুন করে রোয়া সম্ভব হবে না। কারণ বীজের সঙ্কট। একই সঙ্গে উঁচু জমিতে বীজতলা তৈরি করা হলেও তারও ক্ষতি হয়েছে। সব্জি নষ্ট হওয়ায় হু হু করে বাড়ছে দাম। বিভিন্ন জেলায় বহু মাটির বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। 

    বৃষ্টির জেরে বহু জায়গায় জল জমে রয়েছে। তাতে মাটির বাড়ির ভিত আলগা হয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মাটির বাড়ির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১৯৬টি মাটির বাড়ি ভেঙেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬২৫টি বাড়ি। বাঁকুড়া জেলায় ৩০০টি মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারমধ্যে ৮৪টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে। জলের স্রোতে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকের একটি অস্থায়ী সেতু ভেঙে গিয়েছে। দাসপুর থানার তেঁতুলতলায় মাছ ধরতে গিয়ে এক যুবক তলিয়ে যান। প্রায় ২৮ ঘণ্টা তল্লাশির পর উত্তম নায়েক(১৮) নামে ওই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। 

    কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবছর জলের অভাবে বীজতলা দেরিতে তৈরি হয়েছিল। তারপর থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ায় বহু বীজতলা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামে বহু জমির বীজ নষ্ট হয়েছে। আবার সেখানে নতুন করে বীজতলা তৈরি করতে হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের গোবিন্দভোগ ধানের চাষ পিছিয়ে গিয়েছে। জমিতে জল জমে থাকার কারণেই সেখানে বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না। পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মেহেবুব মণ্ডল বলেন, ‘জেলায় সার্বিকভাবে প্রায় ৫৮শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয়েছে। তবে গোবিন্দভোগ ধান চাষ সেভাবে হয়নি।’ এর পাশাপাশি আরামবাগ এবং পশ্চিম মেদিনীপুরেও বহু জমির নষ্ট হয়েছে। 

    কৃষি বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ১৫ আগস্টের মধ্যে ধান রোয়ার কাজ শেষ করা গেলে ফলন ধাক্কা খাবে না। তবে তারপর ধান চাষ হলে ফলন কিছুটা কমতে পারে। তবে, কয়েকটি জেলা বাদে সার্বিকভাবে এখনও পর্যন্ত ধান চাষ ভালোই হয়েছে। টানা বৃষ্টি পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূমের মতো জেলাগুলির কাছে আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। অন্য বছর জলের অভাবে এই জেলাগুলির বহু উঁচু জমি ফাঁকা পড়ে থাকত। এবার সেই জমিগুলিতেও ধান চাষ হয়েছে।  প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাইথন জলাধার থেকে ২২ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। পাঞ্চেত থেকে ৩৩ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ৬৩ হাজার ৬৫০ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়। ডিভিসি জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়ানোয় পূর্ব বর্ধমান, হুগলির ধান চাষ মার খেয়েছে। ডিভিসির জলে রায়না, খণ্ডঘোষ এবং জামালপুর ব্লকের বহু জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)