• পয়লা আগস্ট পরাধীন ভারতের মানভূম অঞ্চলে উড়েছিল তেরঙ্গা
    বর্তমান | ০২ আগস্ট ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, পুরুলিয়া: স্বাধীনতা লাভের আগেই সাবেক মানভূম অর্থাৎ বর্তমান পুরুলিয়ায় উড়েছিল জাতীয় পতাকা। ১৯২৮ সালের ১ আগস্ট পুরুলিয়া পুরসভায় ইউনিয়ন জ্যাকের পরিবর্তে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর থেকে ব্রিটিশ বিরোধী মানসিকতা আরও মজবুত হয়ে ওঠে মানভূমবাসীর মধ্যে। সেই দিনটির স্মৃতি রোমন্থন করল জেলাবাসী। পুরুলিয়া পুরসভার তরফেও দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়।

    ১৯২০ সাল গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিলে তা গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাদ পড়েনি তত্কালীন বিহার প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত মানভূম জেলাও। মানভূমে এই আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে এগিয়ে এসেছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষক নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত। মানভূমবাসীর মনে স্বাধীনতার আকাঙ্খা জাগান তিনি। ১৯২১ সালের নিবারণবাবু, অতুলচন্দ্র ঘোষ সহ কয়েক জনের সহযোগিতায় মানভূমে নিলকুঠিডাঙায় স্বদেশি শিল্পের কারখানা ‘শিল্পাশ্রম’ গড়ে ওঠে। ১৯২৫ সালে বিহার প্রাদেশিক কংগ্রেসের অধিবেশনে গান্ধীজির সঙ্গে সাক্ষ্যৎ হয় নিবারণবাবুর। তাঁকে সঙ্গে নিয়েই মানভূমে এক সপ্তাহ ধরে স্বাধীনতার প্রচার চালান গান্ধীজি। ১৯২৮ সালে মানভূমে পা রাখেন নেতাজি। যা জনমানসে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি করেছিল। ওই বছরের ১ আগস্ট বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী বাল গঙ্গাধর তিলকের মৃত্যু বার্ষিকীতে পুরুলিয়া পুরসভার জুবিলি টাউন হলের ছাদে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন নিবারণচন্দ্র দাশগুপ্ত। 

    তবে, এই জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আগে ২৭ জুলাই পুরসভায় এনিয়ে একটি ভোটাভুটি হয়। পুরসভার ১৯ জন সদস্যের মধ্যে ১১ জন সদস্য জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পক্ষে মত দেন। জহরলাল বসু, গিরীন্দ্রনাথ অধিকারী ও লালমোহন ত্রিবেদী এই তিনজন নির্বাচিত সদস্য এবং চারজন সরকার মনোনীত সদস্য সহ মোট সাতজন পতাকা উত্তোলনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। সেই ঘটনার বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে শুক্রবার ওই একই জায়গায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন পুরসভার চেয়ারম্যান নবেন্দু মাহালি। তিনি বলেন, ব্রিটিশদের ইউনিয়ন জ্যাক নামিয়ে দিয়ে যাঁরা আমাদের গর্বের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন, তাঁদের জন্য আমরা গর্বিত। ব্রিটিশের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এই পুরসভার সদস্যরা যে লড়াই করেছেন, তার সাক্ষ্য আজও বহন করে চলেছে পুরসভার বিভিন্ন দলিল। এরকম একটি পুরসভার চেয়ারম্যান হতে পেরে আমি গর্বিত। 

    সেদিনের সেই ঘটনা সাহস জুগিয়েছিল কোটি কোটি ভারতীয়ের মনে। ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়েও বান্দোয়ান ও বরাবাজার থানায় প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তেরঙ্গা পতাকা শোভা পেয়েছিল। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)