মহকুমা হাসপাতালের কাজকর্ম সুপার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের হাত থেকে কেড়ে নিলেন ক্ষুব্ধ জেলাশাসক
বর্তমান | ০২ আগস্ট ২০২৫
সংবাদদাতা, হলদিয়া: শুক্রবার হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সুপার ও অ্যাসিট্যান্ট সুপারকে তীব্র ভর্ৎসনা করলেন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজকর্ম, পরিচালন ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ জেলাশাসক। ক্ষুব্ধ জেলাশাসক সুপারের হাত থেকে হাসপাতালের সমস্ত কাজকর্ম দেখভালের দায়িত্ব ডেপুটি সিএমওএইচ-১ নারায়ণ মিদ্যাকে দিয়েছেন। তাঁর কাছেই এবার থেকে হলদিয়া হাসপাতালের সুপার সুভাষচন্দ্র মাহাতকে রিপোর্টিং করতে হবে। ফলে, জেলাশাসকের নির্দেশে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের অলিখিত সুপার এখন থেকে ডেপুটি সিএমওএইচ-১।
এদিন হলদিয়া পুরসভার আম্বেদকর কনফারেন্স হলে মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক হয়। দীর্ঘদিন পর এই বৈঠক হয়। বৈঠকে জেলাশাসক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিএমওএইচ বিভাস রায়, মহকুমা শাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়, ডেপুটি সিএমওএইচ-১ নারায়ণবাবু, সুপার সুভাষচন্দ্রবাবু, অন্যান্য চিকিৎসক, পিডব্লুডির ইঞ্জিনিয়ার ও পুলিস আধিকারিক।
বৈঠকের শুরুতেই জেলাশাসক সিএমএইচ-কাছে জানতে চান, হলদিয়া হাসপাতাল কেমন চলছে। সিএমওএইচ হাসপাতাল নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট। হাসপাতালে একাধিক সমস্যা রয়েছে। একথা শোনার পর সুপারকে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন জেলাশাসক। তিনি জানতে চান, এক বছর আগে সুপারকে সহযোগিতা করার জন্য একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটি কী আদৌ কোনও কাজ করছে? এরপরই জেলাশাসকের তোপের মুখে পড়েন সুপার ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার। সুপারের ক্ষমতা খর্ব করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকেও সবার সামনে ধমক দেন জেলাশাসক। জেলাশাসকের কাছে দু’বছর আগে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের নামে ‘দাদাগিরি’র একাধিক অভিযোগ জমা পড়ে। জেলাশাসক তাঁকে অন্যত্র বদলি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। অভিযোগ, হলদিয়া হাসপাতালে চিকিৎসকদের একাংশ সারা সপ্তাহের ডিউটি মাত্র দেড় দিনে করেন। আউটডোরে দেরি করে আসেন। লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় রোগীদের।
এদিন বৈঠকে চিকিৎসকদেরও একহাত নিয়েছেন জেলাশাসক। তিনি বলেন, রোগীরা অভিযোগ করছেন, তিনদিন জ্বর হলেই স্ক্র্যাব টাইফাসের মতো জ্বরের খরচবহুল পরীক্ষা করতে দেওয়া হচ্ছে। এদিন বৈঠক শেষে জেলাশাসক বলেন, ডেপুটি সিএমওএইচ-১ আপাতত হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালের কাজকর্ম দেখবেন। সাতদিন পর আবার রিভিউ মিটিং হবে। হাসপাতালের হাল ফেরে কিনা দেখা হবে। এদিন জেলাশাসক পিডব্লুডির অফিসারকেও ধমক দিয়েছেন। তিনি বলেন, দু’বছর আগে পুরনো হাসপাতাল বিল্ডিং ‘কনডেমড’ ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন বিল্ডিং তৈরির বাজেট বারবার চেয়েও মেলেনি। আগামী ৭ আগস্টের মধ্যে তা জমা করতে বলা হয়েছে।বৈঠকের পর এদিন বিকেলে জেলাশাসক হলদিয়া পুরসভার বালুঘাটায় নবনির্মিত মাল্টিফেসিলিটি ওয়ার্ড অফিস উদ্বোধন করেন। পরে বনবিষ্ণুপুরে ‘শহিদ মাতঙ্গিনী আবাস’ ঘুরে দেখেন। অসহায় মানুষদের ওই আবাস বেহাল হয়ে পড়েছেল। পুরসভা নতুন করে সেটি চালু করেছে। সেখানকার অসহায় বয়স্কদের সঙ্গে কথা বলেন জেলাশাসক, মহকুমা শাসক ও এসডিপিও অরিন্দম অধিকারী।-নিজস্ব চিত্র