• নবদ্বীপের গদখালি মালিতাপাড়া, পাড় ভাঙছে ভাগীরথী
    বর্তমান | ০২ আগস্ট ২০২৫
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: ভাগীরথীর ভাঙনের কবলে পড়ল নবদ্বীপের গদখালি মালিতাপাড়া এলাকা। ভাগীরথীতে জল বাড়লেই নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। আর ভাঙনের আতঙ্কে রাতের ঘুম উবে গিয়েছে এ‌ই এলাকার বৃদ্ধা আনু বেওয়া, ইলিয়াস মালিতা, গৃহবধূ সালিমা, নবম আর সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া সাহিদুল আর ইয়াসমিনের। কেননা ভাঙনের মুখে ঝুলছে তাঁদের বসতবাড়ি। কখন ভাঙনের করাল গ্রাসে চলে যাবে তাঁদের মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু।

    শুধু সাইদুল কিংবা ইয়াসমিনরা নয়, গ্রামের প্রায় ১৫টি পরিবার এই ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছে। গদখালি নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের অভিযোগ, বারবার পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদকে জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না।

    নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা ইলিয়াস মালিতা বলেন, আমাদের বাড়ির প্রায় দুয়ারে চলে এসেছে ভাগীরথী। যেভাবে প্রতিদিন অল্প অল্প করে ভাঙছে তাতে বাড়ি যেকোনও সময় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে নদীতে। সরকারি ঘরের তালিকায় আমাদের নাম ছিল। কিন্তু, আমরা এখনো ঘর পাইনি। যাদের অবস্থা ভালো তারা ঘর পেলেও আমাদের ভাগ্যে ঘর জোটেনি। 

    ইলিয়াস সাহেবের স্ত্রী সালিমা বিবি বলেন, যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তাতে হয়তো কিছুদিনের মধ্যে আমাদের বাড়িও নদীর গর্ভে চলে যাবে। ভাঙনের বিষয়টি স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনিক আধিকারিকরা সবই জানেন। অনেকে মাঝেমধ্যে এলাকা ঘুরে দেখেও গিয়েছেন। কিন্তু ভাঙন রোধে কোনও কাজ হয় না। দিদিকে বলোতে ফোন করেছিলাম। আমাদের গ্রামের অনেকেই এই ভাঙনের আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলা আবাস যোজনার তালিকায় নাম আছে। এখনও ঘর পাইনি। বৃদ্ধা আনু বেওয়া বলেন, কয়েক বছরের ভাঙনে আমাদের জমি ও ঘর ভেঙে চলে গিয়েছে। টিন দিয়ে এই ঘরটা করেছিলাম। এখন এটাও চলে যেতে বসেছে। এই শেষ বয়সে কোথায় যাব। সবাইকে বলেছি কেউ কিছু করছে না।

    শুক্রবার সকালে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল শুধু ইলিয়াসরা নন, আরও প্রায় ১০-১৫টি পরিবার ভাঙনের আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ভাগীরথীতে জল বাড়ায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। দুই স্কুল পড়ুয়া সাহিদুল ও ইয়াসমিন বলে আমাদের খুব ভয় পায়। হয়তো স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখব ভাঙনের কবলে আমাদের বাড়িটিও চলে গিয়েছে। 

    যদিও স্থানীয় মহিশুরা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আকমল সরদার বলেন, অনেক আগে থেকেই ভাঙনের বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রকে বহুবার চিঠি করেছি। তখন কোনও কাজ হয়নি। এখন শুনছি এই ভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ হবে। চার কোটি টাকা অনুমোদন হয়েছে। টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে। মহিশুরা নবনির্মিত রেলব্রিজ থেকে শুরু করে মালিতাপাড়া পর্যন্ত কাজ হবে। ওই এলাকায় যাঁরা ঘর পাযননি, জানি না সার্ভের সময় তাঁরা কিভাবে বাদ গেলেন। আমরা বিডিও অফিসে দরখাস্ত দিয়েছি। জানানো হয়েছে আবার অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

    ওই পঞ্চায়েতের বাসিন্দা তথা জেলা পরিষদের সদস্যা, আরজু বানু খাতুন বলেন, এখানে ভাঙন রোধের কাজের অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। এই বর্ষার পরই কাজ শুরু হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)