ভারত-ব্রিটেন শুল্কমুক্ত বাণিজ্যচুক্তির জের, বিলেতে বাংলার কাঠপুতুল পাড়িতে লক্ষ্মীলাভ
প্রতিদিন | ০২ আগস্ট ২০২৫
অভিষেক চৌধুরী, কালনা: সূদূর ব্রিটেনে বসেই মিলবে এবার বাংলার বিখ্যাত নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল। ভারত-ব্রিটেনের শুল্কমুক্ত বাণিজ্যচুক্তির ফলে প্রত্যন্ত এলাকার শিল্পীদের তৈরি এই পুতুল পৌঁছে যাবে বিদেশের মাটিতে। এর ফলে কুটিরশিল্পের উন্নতি যেমন হবে, তেমনই শিল্পীদেরও হবে ‘লক্ষ্মীলাভ’। বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ। শিল্পসামগ্রী ব্রিটেনে রপ্তানির খবরে বেজায় খুশি পূর্ব বর্ধমানের নতুনগ্রামের শিল্পীরা।
পূর্বস্থলী ২ ব্লকের নতুনগ্রাম কাঠপুতুলের জন্য বিখ্যাত। গ্রামে ঢুকলেই দিনরাত শোনা যায় ছেনি, হাতুড়ির ঠুকঠাক শব্দ। গামার, শিমূল, পিটুলি, লম্বু, সোনাঝুরির মতো গাছ কেটে এখানকার শিল্পীরা বিভিন্ন ডিজাইনের কাঠের পেঁচা, রাজারানী, গৌর-নিতাই, রাধা-কৃষ্ণ, গণেশ, জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মূর্তি, আসবাবপত্র তৈরি করেন। রংতুলির ছোঁয়ায় তাঁরা ফুটিয়ে তোলেন অনুপম শিল্প। এই পেশার সঙ্গে বংশ পরম্পরায় যুক্ত রয়েছেন প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার। মূলত এটাই তাঁদের জীবনজীবিকা। বিভিন্ন ধরনের এই শিল্পসামগ্রী শুধু এই রাজ্যেই নয়, দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি হয়। অর্ডারও মেলে।
জেলা পর্যটন উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ও বস্ত্র বিভাগ, ইউনেস্কোর সহযোগিতায় নতুনগ্রামকে রাজ্যের অন্যতম গ্রামীণ কারুশিল্প কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হয়েছে। সুনিপুন কারুকার্যের জন্য এই গ্রামের শিল্পীদের হাত ধরে রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারও এসেছে। শিল্পের এই ঐতিহ্যকে ভালোবেসে ধরে রাখলেও শিল্পীরা যে প্রচুর অর্থ উপায় করেন তা নয়, মেলায় বিক্রি ও অর্ডারের পাওয়ার মধ্য দিয়ে কোনোরকমে চলে যায় বলে তাঁরা জানান। তবে ভারত-ব্রিটেনের মধ্যে ৯৯ শতাংশ শুল্কমুক্ত বাণিজ্যচুক্তি আওতায় আসায় অন্যান্য রাজ্যের মত পশ্চিমবঙ্গের নতুনগ্রামের কাঠের পুতুল, শান্তিনিকেতনের চামড়া, দার্জিলিংয়ের চা রফতানি হবে ব্রিটেনে। স্বাভাবিক কারণেই নতুনগ্রামের কাঠপুতুলের চাহিদা যে বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। শিল্পী অক্ষয় ভাস্কর, জগবন্ধু ভাস্কর, সুভাষ সূত্রধররা বলেন, “এখানকার শিল্পীদের তৈরি সামগ্রী বিভিন্ন মেলায় বিক্রির সুযোগ থাকলেও বাইরে বিক্রির জন্য তেমন সুযোগ মেলে না। বিদেশের বাজারে এই শিল্প রপ্তানি হলে কাজের সুযোগ বাড়বে। আর্থিক উন্নয়ন ঘটবে। অন্যদিকে নতুনগ্রামের কাঠপুতুল আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পের স্বীকৃতি লাভ করবে। শিল্পের কদর বাড়বে।”